তরুণরা ইচ্ছে করলেই ক্যারিয়ার হিসেবে লেখালেখির জগৎকে সমৃদ্ধ করতে পারে

Print Friendly and PDF
নব প্রত্যয় ফাউন্ডেশন
কবি আসাদ চৌধুরী
আসাদ চৌধুরী। বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক। মনোগ্রাহী টেলিভিশন উপস্থাপনা ও আবৃত্তির জন্য জনপ্রিয় তিনি। আসাদ চৌধুরীর 
জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া নামক স্থানে। পিতা মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী। মাতা সৈয়দা মাহমুদা বেগম। স্ত্রী সাহানা বেগম।
উলানিয়া হাই স্কুল থেকে  প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৫৭ সালে। ১৯৬০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যয়ন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে কলেজে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে আসাদ চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত তিনি ভয়েস অব জার্মানির বাংলাদেশ সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় বাংলা একাডেমীতে দীর্ঘকাল চাকুরির পর তিনি এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
তরুণ প্রজন্মের ক্যারিয়ার ও লেখালেখি ইত্যাদি নানা বিষয়ে ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সের সাথে কথা বলেছেন তিনি।
ভালো লেখক হতে হলে কী প্রয়োজন?
- এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, আমি কার জন্য লিখছি? পাঠকের জন্য নাকি নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য? যদি কোনো লেখা নিজের জন্য হয়, তবে তার ভঙ্গিটা হবে এক রকম। আবার যদি পাঠকের জন্য লেখাটা লিখি তবে তার উপস্থাপনটা হবে আরেক রকম। এখানেই মূলত ভালো লেখক হওয়ার উপাদানটি নির্ভর করছে। বাক্যের গঠন, বিষয়বস্তু, সমসাময়িকতা, প্রাসঙ্গিকতার মতো ছোট খাটো বিষয়গুলো মাথায় রেখে নিয়মিত পরিশ্রম করে এগোতে পারলে এক সময়  ভালো লেখক হয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
বর্তমানে অনেক তরুণ লেখালেখিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিচ্ছে -এটা কতটা যুক্তি সঙ্গত বলে মনে করেন?
- অযৌক্তিকতার কিছু নেই। বরং লেখালেখি জগতে তরুণদের পদচারণা সাহিত্য জগতে অন্য রকম প্রাণ সৃষ্টি করছে। বর্তমানে জীবন নির্বাহের জন্য অন্য পেশার মতো লেখালেখিকে বেছে নেয়া সম্ভব। এখানে যথেষ্ঠ সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা আছে। আমাদের দেশের তরুণ লেখকরা যদিও এটাকে খণ্ডকালীন হিসেবে বেছে নিয়েছেন, কিন্তু তারা ইচ্ছে করলে এখানে পূর্ণকালীন কাজ করে ভালো ক্যারিয়ার হিসেবে এ জগৎ-কে আরো সমৃদ্ধ করতে পারে।
জীবনে সফল হতে কী করা উচিৎ?
- যে কোনো বিষয়ের প্রতি আন্তরিকতা, একাগ্রতা, এবং মনের মধ্যে সততা লালন করে পথ চললে সেই পথই আমাদের সাফল্যে নিয়ে যাবে একদিন।
লেখালেখির জগতে কীভাবে এলেন?
- ছোটবেলা থেকেই গল্প, কবিতা,ছড়া পড়তে আমার বেশ ভালো লাগতো। আমি অল্প বয়স থেকেই প্রেম শুরু করেছিলাম লেখালেখির সাথে। স্থানীয় পত্রিকায়ও লেখালেখি করেছি অনেক। এভাবেই লেখালেখির জগতে প্রবেশ। এর পর শুধুই লিখেছি। এখনো লিখছি, লিখেই যেতে চাই।
বর্তমান সময়ে ক্যারিয়ার ম্যাগাজিন কতটা দরকার বলে আপনি মনে করেন?
- পথিককে তার পথ চেনাতে হলে সঠিক পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন তো আছেই। আর এ রকম একটি ম্যগাজিন বর্তমান সচেতন তরুণদের আরো ভালো দিকনির্দেশনা দেবে এটাই স্বাভাবিক।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Print Friendly and PDF
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড  খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার প্রধান বিদ্যাপিঠ। এটি ঢাকা শহরের  প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
নব প্রত্যয় ফাউন্ডেশন
১৯২১ সালে মাত্র ৩টি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এর যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠাকালে শিক্ষার্থীদের জন্য ৩টি আবাসিক হল ছিল।

বর্তমানে ১৩টি অনুষদ (ভর্তি কার্যক্রম চলে ১০টি অনুষদের মাধ্যমে), ৬৬টি বিভাগ, ৮টি ইনস্টিটিউট, ১৭টি ডরমেটরি, ৩টি হোস্টেল সহ ৩৭টি গবেষণা সেন্টার রয়েছে (তথ্য সূত্র: একাডেমিক ক্যালেন্ডার ২০০৯-১০)। আর ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৩৩১১২ জন ও শিক্ষকের সংখ্যা  প্রায় ১৮০৫ জনে উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রতি বছর এখানে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।
দেশের ক্রান্তিকালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান ও ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল তৎপর। এখনও এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। গত ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টি উদযাপন করে প্রতিষ্ঠার ৯০ বছর। শিক্ষাঙ্গণ পরিচিতি বিভাগে আমাদের এবারের আয়োজন দেশের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ নিয়ে।
অবস্থান
ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে প্রায় ২৫৮ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকালে যার আয়তন ছিল ৬০০ একর বা ২.৪৩ বর্গকিলোমিটার। এর উত্তর দিকে নিউ এলিফ্যান্ট রোড। পশ্চিমে ইডেন কলেজ, দক্ষিণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, পূর্বে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ।
ইতিহাস
সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান প্রস্তাবক। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে স্বাধীন জাতিসত্ত্বার বিকাশের লক্ষ্যে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া  শুরু হয়। ব্রিটিশ ভারতে তৎকালীন শাসকদের অন্যায্য সিদ্ধান্তে পূর্ববঙ্গের মানুষের প্রতিবাদের ফসল হচ্ছে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক ইতিহাসবিদ মতে বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। লর্ড লিটন যাকে বলেছিলেন ‘স্পেল্নডিড ইম্পিরিয়াল কমপেনসেশন’।
পূর্ববঙ্গ শিক্ষাদীক্ষা, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিল। বঙ্গভঙ্গ হওয়ার পর এ অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন হয়, বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে।
১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এর মাত্র তিন দিন পূর্বে ভাইসরয় এর সাথে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে ছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব  সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার আর নাথানের নেতৃত্বে ডি আর কুলচার, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নবাব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দ চন্দ্র রায়, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ এ টি আচির্বল্ড, জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়,  ঢাকা মাদরাসার (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) তত্ত্বাবধায়ক শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, মোহাম্মদ আলী (আলীগড়), প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ এইচ এইচ আর জেমস, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি ডব্লিউ পিক এবং সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ সতীশচন্দ্র আচার্য।
১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং সে বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাস করে ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০’। নাথান কমিশন রমনা অঞ্চলে ৪৫০ একর জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। এই জায়গায় তখন ছিল ঢাকা কলেজ, গভর্নমেন্ট হাউস, সেক্রেটারিয়েট ও গভর্নমেন্ট প্রেসসমূহ।
শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়ে। কলকাতার তৎকালীন একটি শিক্ষিত মহল ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে। এ ছাড়া ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ হতাশ হয়। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাশের আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এ বিলে সম্মতি দেন। এ আইনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি। এ আইনের বাস্তবায়নের ফলাফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি ছিলেন স্যার পি জে হার্টস। প্রথম মুসলমান, বাঙালি ও উপমহাদেশের প্রথম ভিসি স্যার এ এফ রহমান। বর্তমানে ২৭তম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়।  কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ছিল সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারসি ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ান, গণিত এবং আইন।
প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭। শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ (ইংরেজি বিভাগ, এমএ-১৯২৩)।
যে সব প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলেন তারা হলেনÑ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ সি টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জি এইচ ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ এ জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, স্যার এ এফ রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অস্থিরতা ও ভারত বিভক্তি আন্দোলনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্তির পর তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত প্রদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এ দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা উজ্জীবিত হয়। নতুন উদ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকা  শুরু হয়। তৎকালীন পূর্ববাংলার ৫৫টি কলেজ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। ১৯৪৭-৭১ সালের মধ্যে ৫টি নতুন অনুষদ, ১৬টি নতুন বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীসহ শহীদ হয়েছেন বহুজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ
কলা, জীববিজ্ঞান, বাণিজ্য, পরিবেশবিজ্ঞান, শিক্ষা, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, চারুকলা, আইন, চিকিৎসাবিদ্যা, পিজিএমআর, ফার্মেসি, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ।
কলা অনুষদের বিভাগ সমূহ
বাংলা
ইংরেজি
ফারসি ও উর্দু
দর্শন
ইতিহাস
আরবি
ইসলামিক স্টাডিজ
সংস্কৃত ও পালি
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা
ভাষাবিজ্ঞান
নাট্যকলা ও সঙ্গীত
বিশ্ব ধর্মতত্ত্ব
বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগসমূহ
পদার্থ বিজ্ঞান
গণিত
রসায়ন
পরিসংখ্যান
আইন অনুষদ
আইন বিভাগ
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদদের বিভাগসমূহ
অর্থনীতি
রাষ্ট্রবিজ্ঞান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
সমাজ বিজ্ঞান
লোক প্রশাসন
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
নৃবিজ্ঞান
পপুলেশন সায়েন্সেস
শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন
উইমেন্স স্টাডিজ
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ
বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের বিভাগসমূহ
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস
মার্কেটিং
ফিন্যান্স
ব্যাংকিং
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস
জীববিজ্ঞান অনুষদের বিভাগসমূহ
মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ
উদ্ভিদ বিজ্ঞান
প্রাণিবিদ্যা
প্রাণ রসায়নও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান
মনোবিজ্ঞান
অণুজীব বিজ্ঞান
মৎস্য বিজ্ঞান
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি
ফার্মেসি অনুষদের বিভাগসমূহ
ফার্মাসিউটিকাল কেমিস্ট্রি
ক্লিনিকাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি
ঔষধ প্রযুক্তি
ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজি অনুষদ
ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স এবং কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং
ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ
ভূগোল ও পরিবেশ
ভূতত্ত্ব
চারুকলা অনুষদ
ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং
গ্রাফিক ডিজাইন
প্রাচ্যকলা
ভাস্কর্য
কারুশিল্প
মৃৎশিল্প
শিল্পকলার ইতিহাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউটসমূহ
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট
পরিসংখ্যান গবেষণা ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট
তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র
বায়ো মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার
ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ
ব্যুরো অব বিজনেস রিসার্চ
দেভ সেন্টার অব ফিলোসফিক্যাল রিসার্চ
বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ  ইন ন্যাচারাল সায়েন্স
সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সায়েন্স
সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ ইন হিউম্যানিটিজ
উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র
সেন্টার ফর ডিজাস্টার রিসার্চ
ট্রেনিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সাইন্স
সেন্টার ফর রিসার্চ ইন আর্কাইভ অ্যান্ড হিস্টরি
নজরুল রিসার্চ সেন্টার
নাজমুল করিম স্টাডিজ সেন্টার
সেমিকন্ডাক্টার টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টার
সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ
নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্র
ডেলটা স্টাডি সেন্টার
সেন্টার ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ  ইন ফিজিক্যাল, কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস
সেন্টার ফর বায়ো-টেকনোলজি রিসার্চ
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ
হিস্টরি রিসার্চ সেন্টার
বায়োটেকনোলজি রির্সাচ সেন্টার
ঢাকা ইউনির্ভাসিটি সাইবার সেন্টার
সেন্টার ফর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং
জাপান স্টাডিজ সেন্টার
সেন্টার ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ ইন আর্টস এন্ড সোস্যাল সায়েন্স (সিএআরএএসএস)
সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল স্টাডিজ
বাংলাদেশ কালচারাল রিসার্চ সেন্টার
ড. সিরাজুল হক ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
সেন্টার ফর করর্পোরেট গর্ভরনেস অ্যান্ড ফাইনেন্স স্টাডিজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও হোস্টেলসমূহ
জগন্নাথ হল (১০৭২)
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল (২১২৫)
শহীদুল্লাহ হল (পুরাতন ঢাকা হল) (১০৯৫)
ফজলুল হক মুসলিম হল (৭৬৬)
জহুরুল হক হল (পুরাতন ইকবাল হল) (৯০৭)
রোকেয়া হল (১৩৭৪)
স্যার পি জে হার্ট হল
সূর্যসেন হল (পুরাতন জিন্নাহ হল) (৫৭৭)
হাজী মো: মহসীন হল (১৪২০)
শামসুননাহার হল (১৩০০)
কবি জসীমউদ্দীন হল (৩৮৭)
স্যার এ এফ রহমান হল (৪৯২)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল (৭৪০)
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল (৪৭৪)
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল (৬০৮)
বেগম ফজিলাতুন্নিসা হল (৬৪৯)
অমর একুশে হল (৫৯৬)
আইবিএ হোস্টেল, বেগম ফয়জুন্নেসা হল (১৫০)
ডিগ্রি সমূহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি, এমফিল, মাস্টার্স ও অনার্স ডিগ্রি দেওয়া হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ডিপ্লোমা ডিগ্রিও দিয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ভর্তিপদ্ধতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ভর্তির ক্ষেত্রে প্রার্থীকে এইচএসসি বা সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হবে। মোট পাঁচটি ইউনিটে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। ভর্তি  পরীক্ষায়  প্রার্থী নির্বাচিত হয় ভর্তি পরীক্ষা, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ওয়ার্ড কোটা, উপজাতি কোটা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটা এবং অন্ধ কোটায় ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করা হয়।
ডাকসু
বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ছাত্রদের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ ডাকসুকে কেন্দ্র করেই। তবে সম্প্রতি এই ঐতিহ্যবাহী ডাকসু ভবনকে ভেঙে ১২ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে প্রাথমিকভাবে ৩ তলাবিশিষ্ট ভবন তৈরি করা হচ্ছে। অক্সফোর্ড ইউনিয়নের আদলে তৈরি করা হচ্ছে বহুতল নতুন ডাকসু ভবন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের স্মরণীয় করে রাখতে একটি স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নতুন ডাকসু ভবনের প্রথম তলা ফাঁকা থাকবে। দ্বিতীয় তলায় থাকবে ক্যাফেটেরিয়া, তৃতীয় তলায় থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিয়াম অর্থাৎ ডাকসু সংগ্রহশালা। এছাড়া থাকবে ডাকসুর জন্য অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম, একাধিক সেমিনার কক্ষ, লাইব্রেরি, ডাকসু নেতাদের জন্য আলাদা কক্ষ।
টিএসসি
ছাত্র-শিক্ষক মিলন কেন্দ্র খ্যাত এই স্থাপনার স্থপতি কনস্টানটাইন ডক্সাইড। এই স্থানটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক ছাড়াও নগরের অনেক মানুষের মিলন কেন্দ্র। সাস্কৃতিক চর্চার এই স্থানটি বহু সামাজিক ও সাস্কৃতিক সংগঠনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।
মধুর রেস্তোরা
মধুসূদন দে-এর স্মৃতি স্মরণে স্থাপিত একটি বিখ্যাত রোস্তোরা যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট ভবনের সামনে অবস্থিত। এটি ‘মধুর ক্যান্টিন’ নামে অধিক পরিচিত। ‘মধু দা’ ও ‘মধুর কেন্টিন’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য নাম।
অপরাজেয় বাংলা
অপরাজেয় বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে অবস্থিত একটি ভাস্কর্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরণে নিবেদিত তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিত্রায়িত করা হয়েছে। এর স্থাপত্য শিল্পী মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ। ভাস্কর্যটি তৈরির কাজ ১৯৭৩ সালে শুরু হয়ে ১৯৭৯ সালে শেষ হয়। ৬ ফুট বেদীর উপর নির্মিত এর উচ্চতা ১২ফুট, প্রস্থ ৮ ফুট ও ব্যাস ৬ ফুট।
এছাড়াও উল্লেখ করার মত বেশ কিছু স্থাপত্য শিল্প রয়েছে । বিশেষ করে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা, জয় বাংলা, জয় তারুণ্য, রাজু সন্ত্রাস বিরোধী ভাস্কর্য, স্বাধীনতা সংগ্রাম, দোয়েল চত্বর, তিন নেতার মাজার, ক্যাঁকটাস অন্যতম।
একনজরে
মটো : সত্যের জয় সুনিশ্চিত
Truth Shall Prevail
প্রতিষ্ঠা : ১৯২১ সালে
ধরন : পাবলিক, সহশিক্ষা
চ্যান্সেলর : রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান
ভাইস-চ্যাঞ্জেলর : আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
অ্যাকেডেমিক স্টাফ : ১৮০৫
ছাত্রছাত্রী : ৩৩১১২
আয়তন : ২৫৮ একর বর্তমান
প্রতিষ্ঠাকালীন আয়তন : ৬০০ একর
প্রথম মহিলা শিক্ষক : করুণাকণা গুপ্তা (ইতিহাস)
প্রথম ছাত্রী : লীলা নাগ
প্রথম ভিসি : পি.জে, হার্টস
প্রথম মুসলমান ও উপমহাদেশের ভিসি : স্যার, এ. এফ. রহমান (প্রথম বাঙালি)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে প্রথম ভিসি : ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন
ওয়েবসাইট : du.ac.bd , univdhaka.edu
লেখক :  শরীফ হুসাইন

পড়া আত্মস্থ করার গোপন সূত্র

Print Friendly and PDF

www.naboprottoy.blogspot.com
আশিক স্কুলে পড়ে। বাবার ইচ্ছা সে অনেক বড় ডাক্তার হবে। আশিকও চায় তার বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে। কিন্তু আশিকের সমস্যা হচ্ছে সে সহজে পড়া মুখস্থ করতে পারে না। এরকম অনেকেই আছেন যাদের পড়া আত্মস্থ  করতে গলদঘর্ম হতে হয়।

কিন্তু কী এর সমাধান? জানাচ্ছেন- মো: মোজাম্মেল হোসেন
ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসা
যখন আপনি পড়ার টেবিলে বসবেন ফ্রেশ হয়ে বসুন। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে কখনো টেবিলে বসা উচিত নয়। কারণ এতে পড়ায় মনোযোগ থাকেনা। ফলে সময় নষ্ট হলেও পড়া আত্মস্থ হয় না।
সময় নির্ধারণ করা
আপনি কোন বিষয় কতক্ষণ সময় ধরে পড়বেন তা নির্ধারণ করুন। কারণ, কোনো কাজ সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধতা রাখলে কাজটি দ্রুত শেষ হয়। অনেকে অনর্গলভাবে পড়তে থাকেন কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন না।
পড়ায় মন রাখুন
আপনি যখন পড়া শুরু করবেন তখন আপনার মনোযোগ পড়ার দিকে রাখুন। পড়ার সময় অন্য দিকে মন দেয়া যাবে না। তাছাড়া পড়তে বসে অন্য কোনো কাজ করবেন না। কেউ কেউ পড়ার ফাঁকে ফাঁকে অন্য কাজ করেন। যা কোনোভাবেই বাঞ্ছিত নয়।
বারবার পড়ুন
একটি বিষয় বারবার পড়ুন। বুঝে বুঝে পড়ুন। সবসময় তিনটি জিনিস অর্র্জন করার জন্য চেষ্টা করুন। পড়া, পড়া এবং পড়া। তাহলে  অবশ্যই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
আরো কিছু টিপস
- যে বিষয়টা পড়বেন তা বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন।
- পড়া কখনো হুবহু মুখস্থ করবেন না
- নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী দূর করুন।
- পড়ার রুমটি পরিপাটি রাখুন।
- লিখে রিখে পড়ুন।
- যে বিষয়টি বুঝতে সমস্যা হয় তা মার্ক করে রাখুন। পরবর্তী সময়ে শিক্ষকের সাহায্য নিন।
- শোয়ার পূর্বে পড়াগুলো একবার মনে মনে রিভিশন দিন।
- সবসময় মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস রাখুন।

বাড়িয়ে নিন স্মৃতিশক্তি

Print Friendly and PDF
www.naboprottoy.blogspot.com
গাড়ির চাবিটা হারিয়ে ফেলেছেন। এই মাত্র বইটি রাখলেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। পরিচিত মানুষটার নাম মনে করতে পারছেন না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ভাবছেন আপনার স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছেন মনে মনে। আসলে এটা তেমন কোনো সমস্যাই না।
তবে হ্যাঁ একেবারেই মনে করতে পারছেন না বা বেমালুম ভুলে গেছেন আপনি গাড়িটি কোথায় পার্ক করেছেন! তবে ভাবনার কথা বই কি। আমরা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন কিছু স্মৃতি হারাই। স্মৃতি না হারালে একদিন স্মৃতির পাহাড়ের আড়ালে আমরা আমাদেরকেই হারিয়ে ফেলবো। তাই এটা ভাবনার বা ভয়ের কোনো ঘটনা নয়। তবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে এই স্মৃতি হারাবার মাত্রাটা যাতে সিরিয়াস পর্যায়ে না যায়। স্মৃতি শক্তি হারানোর রহস্য নিয়ে লিখেছেন নাজমুন নাহার মিলি
স্মৃতিশক্তি কী?
স্মৃতি হচ্ছে মনে রাখা। কোনো ঘটনা বা বিষয় স্বল্প বা দীর্ঘসময়ব্যাপী মনে রাখা। এই স্মৃতি ধারণ করার ক্ষমতাই হলো স্মৃতিশক্তি। গবেষণায় জানা যায়, স্মৃতিশক্তি তৈরি হয় এক জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যাতে জড়িত থাকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ও বিভিন্ন যোগাযোগ-প্রক্রিয়া।
স্মৃতিশক্তি সাধারণত দুই ধরনের- স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি ও দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি।
স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি : যখন মস্তিষ্ক স্বল্প সময়ের জন্য তথ্য ধরে রাখে অর্থাৎ কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের জন্য, তাকে স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বলে।
দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি : মস্তিষ্ক যখন উদ্যমের মাধ্যমে ক্রিয়া করে, হতে পারে সেটি সজ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে এবং যা নিজের কাছে খুবই অর্থবহ, সেগুলোই দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তির রূপ নেয়। দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতির ক্ষেত্রে মানুষ দীর্ঘসময় ধরে কোনো বিষয় মনে রাখতে পারে।
যে কারণে লোপ পায় স্মৃতিশক্তি
২০ বছর বয়সটি আমাদের স্মৃতির জন্য একটি বিশেষ সময়। এই সময় আমরা একটি ধাপ অতিক্রম করি। স্বাভাবিকভাবে গঠনগত কারণেই খুব ধীরে ধীরে আমাদের স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে এ সময় থেকেই। পঞ্চাশের পর আমরা কোথায় কোন জিনিস রাখি তা ভুলে যাই। এক জায়গায় রেখে খুঁজি আরেক জায়গায়। এপয়েন্টমেন্ট ভুলে যাই। নতুন কারো সাথে পরিচয় হলে নাম মনে রাখাটা হয়ে যায় দু:সাধ্য। কিন্তু কেন এমন হয়?
নানা কারণে এমনটি হয়ে থাকে। স্বাস্থ্যগত ও আরো অন্যান্য কারণ এর জন্য দায়ী। স্ট্রোক, ব্রেইন টিউমার, হরমনজনিত সমস্যা যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির অতিক্ষরণ বা কমক্ষরণ ইত্যাদি নানা কারণে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। তা ছাড়া এইচআইভি, যক্ষ্মা, সিফিলিস (শেষ পর্যায়ে), চর্মরোগ, ব্যাকটেরিয়াজনিত মস্তিষ্কের প্রদাহ (ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস) ইত্যাদিও স্মৃতি হারানোর জন্য বিশেষভাবে দায়ী। ভিটামিন বি ১, বি ১২-এর ঘাটতিও আপনার স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিতে পারে।
আমরা অনেক সময় অনেক ওষুধ সেবন করি যা আমাদের স্মৃতিশক্তির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যেমন- ব্যথা নাশক ওষুধ, ঘুমের ওষুধ, বিষন্নতা নিবারণী ওষুধ ইত্যাদি খেলে অনেক ক্ষেত্রে আমরা স্মৃতি হারাই। মাথায় আঘাতজনিত কারণেও স্মৃতি হারাতে পারে। যারা অ্যালকোহল সেবন করেন তাদের স্মৃতি হারাবার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, অনিয়মিত ঘুম বা নিদ্রাহীনতা, বিষন্নতা ইত্যাদিও আমাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পাবার অন্যতম কারণ।
কর্টিসল (একটি স্ট্রেস হরমোন) মস্তিষ্কের হিপপোক্যাম্পাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যদি স্ট্রেস (মানসিক চাপ) দীর্ঘস্থায়ী হয়। স্ট্রেস মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। ঘুমের সমস্যা যেমন- ‘ইনসোমনিয়া’ আপনাকে ক্লান্ত রাখবে এবং দিনের বেলায় আপনার মনোসংযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। ধূমপান বা অ্যালকোহল পানে মস্তিষ্কে স্ট্রোক হয়ে স্মৃতিহারা হতে পারেন। তা ছাড়া এই ধূমপান করার ফলে ধমনি সরু হয়ে মস্তিষ্কের অক্সিজেন-প্রবাহ কমিয়ে দেয় যা আপনার স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দিতে পারে।

স্মৃতিশক্তি বাড়াবার এবং নষ্ট না হবার কিছু কৌশল:

কোলেস্টোরেল নিয়ন্ত্রণ
মস্তিষ্কে কম রক্ত প্রবাহ হলে তা স্মৃতিশক্তির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। ৩ হাজার ৭শ’ লোকের মধ্যে এক ব্রিটিশ গবেষণায় দেখা যায়, কম রক্ত প্রবাহের কারণে এবং এইচডিএলের নিম্ন স্তরের কারণে স্মৃতিশক্তি হারানোর ঝুকি ৫০% বেড়ে যায়। এ দিকটি মাথায় রেখে এইচডিএল বাড়াতে হবে। কোলেস্টোরেল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।


মস্তিষ্কের ব্যায়াম

আমরা শারীরিক গঠন ও শক্তি ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করি। কিন্তু মস্তিষ্কের ব্যায়াম? প্রথমে তো শুনে আপনার হো হো হাসিই পেতে পারে। কিন্তু জেনে রাখুন, মাংসপেশির শক্তির মতো স্মৃতিশক্তিও ‘ব্যবহার করুন অথবা হারান’-এ নীতিতে চলে। আপনি যত মস্তিষ্কের ব্যবহার করবেন, আপনার স্মৃতিশক্তিও তত ধারালো হবে। আর মস্তিষ্ককে অধিক সক্রিয় করতে ‘নিউরোবিক’ ব্যায়াম করুন প্রতিদিন। যেমন- চোখ বন্ধ করে গোসল করা বা ড্রেসআপ করা, নতুন খেলা শেখা, খবরের কাগজে নতুন নতুন পাজল বা ক্রসওয়ার্ড চর্চা করা করুন। সম্ভব হলে প্রতিদিনই। যাঁরা নিয়মিত বুদ্ধির চর্চা করেন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি হ্রাস তুলনামূলকভাবে কম হয়। তাই ভালো স্মৃতিশক্তি পেতে চাইলে নিয়মিত পড়ুন, শিখুন ও সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণ করুন। অলসভাবে বসে থাকলে স্মৃতিশক্তি ভোঁতা হয়ে যায়।


মনোযোগ দিয়ে পড়ুন

আপনার স্মৃতিতে ধরে রাখতে হলে বিষয়টি মস্তিষ্কে লেখা হতে হবে। আর যদি যথেষ্ট মনোযোগ না দেন, মস্তিষ্কে লেখার কাজটি হবে না। মস্তিষ্কের যথাযথ স্থানে একটি তথ্যের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় আট সেকেন্ড সময় লাগে। তাই বহু কর্ম একসঙ্গে করতে গেলে মনোযোগ নষ্ট হয়। তাই মনোযোগের সাথে ধীরে কাজ করুন।
অন্বেষা পরীক্ষার আগে পড়ার সুযোগ পায়নি। কিন্তু পরীক্ষা তো দিতেই হবে। হলে যাবার আগে সে তার এক সহপাঠীকে বলল- এই প্রশ্নের উত্তরগুলো আমাকে একবার বলবে? সহপাঠী তাকে উত্তরগুলো পড়ে শুনালো। দেখা গেলো ওই একবার শুনে সে পরীক্ষায় ভালো করলো। অর্থাৎ অন্বেষার শুনে শেখার ক্ষমতা ভালো। তবে অধিকাংশ মানুষ দেখে শেখে। তারা ভালোভাবে শেখে পড়ে পড়ে অথবা যা দেখার তা দেখে দেখে।


লিখে রাখুন

যা মনে রাখতে চান সে বিষয়গুলো খাতায় বা ডায়েরিতে লিখুন। জটিল বিষয়গুলোর নোট নিন এবং পরে ক্যাটাগরি অনুযায়ী পুনর্বিন্যাস করুন। অপেক্ষাকৃত বেশি জটিল বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে মুখস্থ করার চেষ্টা না করে মৌলিক ধারণার ওপর জোর দিন। বিষয়টি আগে নিজে বুঝে নিন, তারপর অন্যকে নিজের ভাষায় বোঝানোর ক্ষমতা অর্জন করুন। দেখবেন অনেক সহজ হয়ে গেছে।


স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস

স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। ভালোলাগার জন্য নয়, পুূিষ্টকর খাবার খান। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখুন যার খাদ্যমান অনেক বেশি। ফল, শাকসবজি, খোসাসমৃদ্ধ দানাদার শস্য ও স্নেহজাতীয় (শস্যদানার তেল, মাছের তেল) খাদ্যে অনেক স্বাস্থ্য উপকারী গুণ আছে। পাশাপাশি এগুলো স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন ঘটায়। নিচে কিছু স্মৃতিশক্তি-সহায়ক খাদ্য-উপাদান দেয়া হলো-
ভিটামিন বি-৬, বি-১২ এবং ফলিক এসিড আছে- পালংশাক ও গাঢ় সবুজ শাক, অ্যাসপারাগাস, স্ট্রবেরি, বাঙ্গি, তরমুজ, শিমের কালো বিচি এবং অন্যান্য ডালজাতীয় শস্যদানা, টকজাতীয় ফল ও সয়াবিনে।
অ্যান্টি অক্সিড্যান্টসমূহ আছে জাম, মিষ্টি আলু, লাল টমেটো, পালংশাক, ব্রকলি, সবুজ চা, বাদাম ও বিচি, টকজাতীয় ফল এবং কলিজায়।
তাই বিভিন্ন ধরনের রঙিন শাকসবজি ও ফল খান। সাথে উদ্ভিদজাত তেল দিয়ে রান্না করা তরকারি খান। প্রাণীজ তেল আপনার ধমনি সরু ও বন্ধ করে দিতে পারে। এগুলো পরিহার করলে তবেই মস্তিষ্ক আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তখন আপনি হয়ে উঠতে পারেন একজন স্মৃতিধর মানুষ।
স্বাস্থ্যবান্ধব অভ্যাসগুলো লালন
- আপনাকে চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দুশ্চিন্তা বা টেনশনে মানুষের অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে গ্লুকোকরটিকয়েড নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন মস্তিষ্কের কোষগুলোকে দ্রুত আক্রান্ত করে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
- অ্যালকোহল ও ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
- স্বভাবের দিক দিয়ে গোছানো হলে অনেক কিছুই সহজে মনে থাকে। নির্দিষ্ট জিনিস সব সময় নির্দিষ্ট জায়গায় রাখলে প্রয়োজনের সময় হাতড়ে বেড়াতে হয় না।
- নেতিবাচক চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সন্দেহবাতিক মন মস্তিষ্কের ক্ষতি করে।
- মনের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগটা খুব গভীর। তাই মনের পরিচর্যা করুন। নিজেকে নিয়োজিত রাখুন সৃষ্টিশীল কাজে।
- নিয়ম করে দিনের কিছু সময় মেডিটেশন করুন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। সম্ভব না হলে অন্তত সকাল-সন্ধ্যা খোলা ময়দানে হাঁটুন। নামাজের ভেতর এ সবগুলো উপাদানই বিদ্যমান। তাই মুসলমানরা নিয়মিত নামাজ আদায়ের চেষ্টা করুন।
- সারাক্ষণ কাজ আমাদের মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে তোলে। ক্লান্তি মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
স্মৃতিশক্তি দৃঢ় করতে ঘুম
স্মৃতিশক্তি সংহত বা দৃঢ় করার জন্য ঘুম চাই। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে পড়া বা শেখা বিষয়গুলোকে মনে রাখার জন্য ঘুম দরকার। বোস্টনের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ঘুম গবেষক জেফরি এম ইলেনবোগেন বলেন পড়া পড়ে মগজে ঢোকানো, পঠিত বিষয়গুলো মগজে স্থিত করা এবং পরে ব্যাপারগুলো মনে করতে পারা। কোনো কিছু শেখার ব্যাপারকে এই তিনটি স্তরে ভাগ করা যেতে পারে।
এর মধ্যে পড়ে মগজে ঢোকানো এবং পরে বিষয়গুলো মনে করতে পারা এ দুটো স্তর সম্পন্ন হয় জেগে থাকা অবস্থায়। আর শেখা, পঠিত বা মুখস্থ বিষয় মগজে স্থিত হওয়ার ব্যাপারটি ঘটে ঘুমের সময়। সুতরাং নিয়ম মাফিক ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রেইন অ্যান্ড বিহেভিয়ার রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় দেখেছেন, দিনের বেলায় ৯০ মিনিটের হালকা ঘুমও স্মৃতিশক্তিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সহায়ক। এমনকি ছয় মিনিটের ঘুমও স্মৃতিশক্তিকে সংহত করতে পারে এ রকম ফলই পেয়েছেন জার্মানির ডুসেলডর্ফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণায়।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য প্রসেডিং অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের বিশেষজ্ঞরা জানান ভাঙা ভাঙা ঘুম স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে ফেলতে পারে। মস্তিষ্ক ও ঘুম দুটি পারস্পরিক বিষয়। প্রায়ই দেখা যায়, ঘুম পুরো হওয়ার আগেই কেউ যদি জেগে যায় তাহলে সে হঠাৎ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। এ রকম বারবার হলে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের নিউরনগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। শেখা জিনিস মস্তিষ্কে সংহত হয় না। অতএব, মনে করার শক্তি বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম চাই।

সুন্দর হোক হাতের লেখা

Print Friendly and PDF

Nabo Prottoyকাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং‘-হাতের লেখা নিয়ে প্রায়ই 
এমন মন্তব্য শোনা যায়।
অনেকে মনে করেন, কম্পিউটারের এই যুগে হাতের লেখা ভালো না হলে কী
আসে যায়। কিন্তু ঝকঝকে, সুন্দর হাতের লেখার কদর সব সময়ই আছে।
আর এ জন্য বাড়ি থেকেই চর্চা শুরু হওয়া উচিত। যেদিন শিশুর হাতে খড়ি হলো, সেদিন থেকেই নজর দিন তার হাতের লেখার দিকে।
শিল্পী হাসেম খান শিশুদের হাতের লেখা সুন্দর করার সহজ কিছু পরামর্শ দিলেন। ‘শিশুদের সামনে কারও সুন্দর হাতের লেখা তুলে ধরতে হবে, 
সেই লেখা অনুসরণ করে যাতে তারা নিজেদের লেখা সুন্দর করতে পারে।
প্রতিটি বর্ণ যাতে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, এমনভাবে লিখতে হবে।‘ বলেন তিনি। শিশুদের প্রায়ই তাগাদা দেওয়া হয় দ্রুত লেখার জন্য। হাতের লেখা খারাপ হওয়ার এটি আরেকটি কারন বলে মনে করেন তিনি।ঘড়ি ধরে দ্রুত লেখা অনুশীলন করা যেতে পারে এ ক্ষেত্রে। হাতের লেখা সুন্দর রেখে দ্রুত লেখায় অভ্যস্ত করে তুলতে হবে শিশুদের। প্রথম দিন হয়তো এক পাতা লিখতে অনেক সময় লাগবে। অনুশীলনের মাধ্যমে এরপর সময়টি ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে মনে করেন হাশেম খাঁন।সুন্দর হাতের লেখার জন্য অনুশীলনের বিকল্প নেই। বাড়িতে তো বাচ্চকে অনুশীলন করাবেনই। বাইরেও আজকাল হাতের লেখা সুন্দর করানোর নানা কোর্স চালু হয়েছে। শিশুদের হাতেখড়ি হওয়ার পর খাতা-কলমে লেখা কিছুটা আয়ত্বে চলে এলেই হাতের লেখা সুন্দর করার অনুশীলন শুরু করা উচিত। এ জন্য কিছু উপায় বাতলে দিয়েছেন শিশু একাডেমীর সুন্দর হাতের লেখা প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রশিক্ষক মেজবাহ উদ্দিন। ‘তারাহুড়ো এবং অমনোযোগিতা বাচ্চাদের হাতের লেখা খারপ হওয়ার অন্যতম কারন। বলপয়েন্ট কলম নয়, বরং বাচ্চাদের উচিত পেনসিল দিয়ে লেখা। মূল পড়ামোনার পাশাপাশি প্রতিদিন একপাতা করে লেখা শেখানো, অনুশীলন করানো উচিত।‘ বলেন তিনি। তার পরামর্শ হলো-
* বাচ্চাদের খাতার পুরো লইন ভরে লেখানো উচিত।
* প্রতিটি বর্ণ যেন সমান হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
* পেনসিলের শিষ থেকে এক ইঞ্চি দূরত্বে পেনসিল ধরতে হবে।
* সঠিক উচ্চতার চেয়ার-টেবিলে বসে লেখা লিখতে হবে। মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে হবে।
* প্রাথমিক পর্যায়ে বর্ণগুলো সোজা করে লিখতে হবে।
* তিনকোনা বর্ণগুলো সবচেয়ে সোজা। আগে সে অক্ষরগুলো থেকে লেখা অনুশীলন শুরু করতে পারে। যেমন-ব,ক।
* খাতায় বর্ণে আকারে ফোঁটা দিয়ে দিন। শিশুকে তার উপর হাত ঘুরিয়ে বর্ণ লেখা অনুসরণ করান।
* কোন বর্ণে মাত্রা আছে, কোনটায় অর্ধমাত্রা ইত্যাদি ভালোমতো জেনে সে অনুযায়ী অনুশীলন করান।
সূত্র-প্রথম আলো (নকশা)- ২০১২

কিভাবে লেখা-পড়া করব?

Print Friendly and PDF

নব প্রত্যয় ফাউন্ডেশনমা. হাবিবুর রহমান
সারা বছর লেখাপড়া না করে পরীক্ষার পূর্বে চোখে অন্ধকার দেখা কোন কোন সময় পড়া ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া কোন কোন শিক্ষার্থীর স্বভাব ভাই হতাশ হবেন না। সহিঞ্চু হয়ে পড়তে শুরু করেন। পাহাড় বলে যা মনে হচ্ছে তা মিষ্টি হালুয়া বলে মনে হবে। যা ভুল হয়েছে তা হয়েছে। আর বিলম্ব না করে ধৈর্যশীল হয়ে পড়তে থাকুন। দেখতে পাবেন কয়েক দিনেই অনেকটা এগিয়ে গেছেন। বসে বসে ভাবলে কিছু লাভ হবে না। ওতে যা পারতেন তাও পারবেন না। যে আপনার চেয়ে ভাল জানে সে আপন সহপাঠী হলেও অহংকার ত্যাগ করে তার কাছে সহযোগিতা নিন। তাতে কোন লজ্জাবোধ করবেন না। পূর্ববর্তী মহা মনীষীগণ তো এরূপ করেই উচ্চ আসরে আসীন হয়েছেন। লজ্জা তাদের অধ্যয়নের কোন ক্ষেত্রেই পরাভূত করতে পারেনি। অনুরূপ তারা অহংকারও করতেন না। কারণ অহংকার করলেই মানুষ কার্য ক্ষেত্রে ঠকে যায়। যে বেশী জানে তার কাছে গিয়ে নত হয়ে পড়া-শুনা নেয়া ভাল।
মেধাবী ছাত্র শিক্ষকের মত সহপাঠীকে পড়িয়ে দিতে পারে। কোন ভাই লজ্জাবোধ করে আজ তার কাছে যাচ্ছে না। কাল সে আপনাকে ছেড়ে উচ্চ শ্রেণীতে পদার্পন করবে এবং শিক্ষার উচ্চ আসন দখল করে নিবে। আপনি যেখানে বর্তমান, সেখানে পড়ে থেকেই অর্থ সম্মান হারাবেন। অনেক শিক্ষার্থী ভাবে যে, আমি খুব জানি। এ ধারণা সর্বনাশের মূল। খরগোশ বেশী দৌড়াতে পারলেও অনেক সময় কচ্চপের কাছে হেরে যায়।
তাই বছরের প্রথমে প্রত্যেকদিনকার পড়া প্রত্যেক দিনইে পড়ে নেয়া উচিৎ। কখনও অলসতা করে ফেলে রাখা উচিৎ নয়। তাতে পরীক্ষার সময় মাথায় পাহাড় চাপবে। ফলে অকৃতকার্যই অনিবার্য হয়ে দাড়াবে।
একদা হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর তরফ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হলেন যে, আগামীকাল প্রাতে প্রথমে মাঠে যা দেখতে পাবে, তাই আহার করবে। তিনি প্রাত:কালে মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখলেন একটা বিরাট পাহাড়। পাহাড় দেখেই মূসা (আঃ) ভীত হলেন। ঘাবরে গেলেন কি করে এত বড় পাহাড় খাব। কিন’ খোদার নির্দেশ । তা অমান্য করা যায় না। তাই তিনি অগ্রসর হতে লাগলেন । যতই নিকটবর্তী হতে লাগলেন ততই বৃহৎ দর্শন পাহাড় ভুদ্র হতে লাগলো। নিকটে যেয়ে দেখলেন পাহাড় নয় এক টুকরা হালুয়া মাত্র। পরম আনন্দে মুখে ফেলে দিয়ে সুস্বাদু হালুয়াটা খেয়ে ফেললেন।
ভাই শিক্ষার্থী ! আপনি জানেন এঘটনার শিক্ষা কি? শুনুন এঘটনার দ্বারা শিক্ষা হল- কোন কাজ দূর থেকে কঠিন মনে হলেও চেষ্টা করলে তা অতি সহজ হয়ে ওঠে। কাজ দেখে কখনও ভয় পেতে নেই। গুরুত্ব সহকারে একটু চেষ্টা করা দরকার। শিক্ষা কালীন যারা অশ্লীল ও বেহায়াপনা কাজে জড়িত থাকে, তারা পাঠে মনঃসংযোগ করতে পারে না। পড়াও তাদের হয় না। মনটা থাকে মাতাল, অসৎ সাহচর্যে , অশোভ গান, সংগীত, দুন্দ পুস্তক, অশ্লীল আলাপ, নারী সম্প্রীতি ও মোবাইল ব্যবহার পরিত্যাগ করতে হবে এবং একান্ত অলংঘনীয় কর্তব্য । নতুবা লেখাপড়ায় সাফল্য অর্জন করতে পারবে না।
প্রিয় পাঠক,শিক্ষার্থী বন্ধুগণ! আমার এই পরামর্শটা কেমন লাগলো? অশোভ মনে হল না তো? আসলে আমাদের জীবনের মুহুর্তগুলোকে এভাবে ভেবে-চিন্তে পরিচালনা করা উচিৎ। আসুন আমরা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় নিজেরেকে যথাযথ আত্ননিয়োগ করি এবং আদর্শ মানব হিসেবে গড়ে তুলি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন।

মন বসে না পড়াশোনায়

Print Friendly and PDF
এস এম মাহফুজ
নব প্রত্যয় ফাউন্ডেশন
মুরব্বি, শিক্ষক, অভিভাবক সবাই একটা কথা বলেন ‘মন দিয়ে পড়। মনের কলিতেও তারই প্রতিধ্বনি হয়েছে’ মন দিয়ে লেখাপড়া, মন দিয়ে খেলা, সব কাজে মন দিতে করো নাকো হেলা। আসলে এই মনই সকল কাজের মূল। যেখানে যে কাজে মন নেই সে কাজটাই মাটি। ধর তুমি পড়ার টেবিলে বসে আছ, পড়ছ কিন্তু পড়ায় মন নেই। তোমার পড়া কখনেই আয়ত্ত হবে না। তাই পড়াশোনায় মন বসানোটা আবশ্যক। এক্ষেত্রে কয়েকটি টিপস অনুসরণ করা যেতে পারে।
তুমি কী আসলেই অমনোযোগী?
তোমার পড়াশোনায় মন নেই মানে হচ্ছে তুমি অমনোযোগী। এ জন্য প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন কর আমি কি সত্যিই অমনোযোগী? তোমার মন যদি সায় দেয় আমি অমনোযোগী নই, তাহলে তুমি পড়। একজন ছাত্র হিসেবে অমনোযোগটা খারাপ এটা যখন তুমি বুঝতে পারছ। তুমি যখন মনোযোগী ছাত্র হিসেবে নিজেকে ভাবছ তাহলে মন দিয়েই পড়।
কারণ চিহ্নিত কর
ধরা যাক তোমার সত্যিই পড়ায় মন বসে না, তুমি অমনোযোগী। এ জন্য প্রথমেই কারণ চিহ্নিত কর ‘কেন তোমার পড়ায় মন বসে না? কারণ থাকতেই পারে। সে কারণগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করার চেষ্টা কর। এমন হতে পারে তোমার ঘুম আসে বা তোমার শারীরিক দুর্বলতা আছে। সে জন্য তুমি ডাক্তারের শরণাপন্ন হও। হতে পরে বেশিক্ষণ পড়তে পড়তে অমনোযোগী হয়ে যাও, তখন একটু পর পর পাঁচ মিনিট বিশ্রাম নাও। হতে পারে একটা ঘটনায় তুমি মুষড়ে পড়েছ, সে ঘটনা দ্রুত মিট করার চেষ্টা কর। ব্যস! এবার মনোযোগী হও।
মন বসাতে প্রেরণা
প্রেষণা মানে অনুপ্রেরণা। তুমি যে পড়ছ, কেন পড়ছ তা তোমার কাছে স্পষ্ট থাকা চাই। ধরা যাক তুমি পরীক্ষায় পাসের জন্য পড়ছ, এটা তুমি জান কিন্তু পাস করলে কী হবে জান না। তোমাকে ভাবতে হবে ভালো পাস করলে আমি পুরস্কার পাবো, বড় ক্লাসে উঠব, বাহবা পাবো এভাবে সব পরীক্ষায় ভালো পাস করলে অনেক বড় হবো এ ধরনের অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে পড়, মন আসবে।
টার্গেট করে পড়ুন
পড়ায় মন বসাতে টার্গেট করে পড়। সাময়িক টার্গেট। ধর কাল ক্লাসে একটা পরীক্ষা। রাতে পড়তে বসলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেল পরীক্ষায় আমি ভালো নাম্বার পাবোই, এই ভেবে পড়তে শুরু কর মন আসবে। কিংবা তুমি পড়তে চাওনা সবাই তোমাকে বকে। একটা জিদ ধর যে, এবার আমি সবাইকে দেখিয়ে দেবো পরীক্ষায় ভালো পাস করে, এ জিদই তোমার মনকে নিঃসন্দেহে পড়াশোনায় বসাবে। টার্গেটের ক্ষেত্রে কম করবে কেন? বেশিই কর।
ঝামেলা মুক্ত হয়ে পড়
পড়তে বসতে নানা ঝামেলা মাথায় নিয়ে বসলে মন না বসারই কথা। সেক্ষেত্রে তুমি সব ঝামেলাকে ঝেড়ে ফেলে, নিরিবিলি জায়গায় পড়তে বস, তখন তোমার চিন্তা একটাই থাকবে পড়া আর পড়া। তোমার ‘এক মন’ শুধুই পড়া। সুতরাং মন বসবে না কেন?
পড়ছেন যেহেতু মন দিয়েই পড়ুন
তুমি পড়ার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে টেবিলে বসেছ। এর অর্থ এখন পৃথিবীর সব কাজ তোমার কাছে অর্থহীন, তোমার একমাত্র কাজ পড়া, তুমি টেবিলে যতক্ষণ বসে আছ পড়ার জন্য।
সুতরাং তুমি পড়ছ যেহেতু অত্যন্ত নিবিষ্ট মনেই  পড়। কারণ এখন নিবিষ্ট মনে না পড়ার তো কোনই  মানে নেই।
এটা তো ঠিক তুমি মনোযোগ দিয়ে এক ঘণ্টা পড়লে আর অমনোযোগী হয়ে পাঁচ ঘণ্টা পড়লেও তা কাভার হয় না। তোমার মনোযোগ দিয়ে পড়ার মাধ্যমে যে পড়াটা তোমার মাথায়  ঢুকে গেছে তা তুমি কখনোই ভুলবে না। তোমার গড়িমসি কিংবা পড়তে বসি বসি করে নিজেকেই ফাঁকি দিচ্ছ। মনে রাখবে কেউ জোর করে তোমাকে পড়াতে পারবে না তোমার নিজের তাগিদ যদি না থাকে।

 
Design by AbsCreation