যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষা: আবেদন প্রক্রিয়ার কিছু তথ্য

Print Friendly and PDF
ছবিটি আমার সাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের alma mater নামের ভাস্কর্য, আমার তোলা, উইকিতে দেয়া
ছবিটি আমার সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের
'আলমা মেটার' নামের ভাস্কর্য, আমার তোলা।
ড. রাগিব হাসান: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর যাই হোক না কেনো, একটা দিক থেকে বিশ্বে প্রথম সারিতে, তা হলো এখানকার উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থা। মার্কিন গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা (অর্থাৎ পিএইচডি বা মাস্টার্স) বেশ সমৃদ্ধ, এবং শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট খাটতে, পড়তে, লিখতে, ও উপস্থাপন করতে হয়। অন্যান্য অনেক দেশে যেমন কোর্সওয়ার্ক ছাড়াই সরাসরি ৩ বছরে পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে দেয়া হয়, এখানে তা নয়, বরং শুরুতে ২ থেকে ৩ বছরে নানা উচ্চতর কোর্স করার পরে বাকি ৩ বছর গবেষণা করলে তবেই পিএইচডি ডিগ্রি মেলে। তাই মার্কিন উচ্চতর শিক্ষা সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ কাঙ্ক্ষিত।
এদেশের উচ্চতর পর্যায়ে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই বিদেশী, অন্তত প্রকৌশল ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রে। আমার সাবেক ভুট্টাক্ষেত বিশ্ববিদ্যালয় ৪০০ গ্র্যাজুয়েট ছাত্রের মধ্যে সম্ভবত ৩৫০ এর বেশি ছিলো বিদেশী। এদের মধ্যে চীনাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়। জনসংখ্যার হিসেবে বাংলাদেশ থেকে বরং অনেক কমই আসে এদেশে উচ্চতর পর্যায়ে।
শিক্ষাখাতে মার্কিন সরকার খরচও করে বিপুল পরিমাণ। উদাহরণ দেই, আমার সাবেক ভুট্টাক্ষেত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০ পিএইচডি পর্যায়ের ছাত্রদের মধ্যে এমন কাউকে দেখিনি, যে পূর্ণ ফান্ডিং পায়নি। সবাইই হয় গবেষনা সহকারী, বা শিক্ষা সহকারী হিসেবে ফান্ড পায়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই হারটা একটু কম,কিন্তু তার পরেও অধিকাংশই ফান্ড পেয়ে থাকে।

ভর্তি প্রক্রিয়া
এবার দেখা যাক, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়াটা কীরকম।

আবেদন
ভর্তির মৌসুম শুরু হয় সাধারণত নভেম্বর থেকে, আবেদন নেয়া হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বা জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত।
অধিকাংশ জায়গাতেই যা যা লাগে তা হলো
- স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (একটা রচনা)
- ২ বা ৩টি রেকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র
- টোফেল স্কোর
- (অনেক ক্ষেত্রেই) জিআরই স্কোর
- (কোনো কোনো ক্ষেত্রে) সাবজেক্ট জিআরই স্কোর

স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (আমি কী হনুরে, কেনো এখানে আসবো রে, ইত্যাদি)
স্টেটমেন্ট অফ পারপাস হলো মোটামুটি ২ পৃষ্ঠার একটি রচনা, যাতে লিখতে হয় নিজের সম্পর্কে, কেনো এই বিষয়ে আগ্রহ, কেনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রহ, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। ভর্তির ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ। এটা খুব সাবধানে লেখা দরকার, বেশ সময় নিয়ে হলেও। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অন্যদের থেকে বা নেট থেকে জোগাড় করা রচনা নিজের নামে চালিয়ে দেয়, যা ধরতে পারা যায় খুব সহজেই।

“আমার দেখা সেরা ছাত্র”
রেকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র নিতে হয় শিক্ষকদের কাছ থেকে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আমাদের দেশে শিক্ষকেরা চিঠিগুলো লেখেন না, সাধারণত ছাত্রকেই লিখে আনতে হয় নিজের রেকমেন্ডেশন, আর শিক্ষকেরা কেবল তা সই করে দেন। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অনেকের সাথে কথা বলে দেখেছি, তারা এই ব্যাপারটি জানেন ভালোই। তাই ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলো হতে আসা রেকমেন্ডেশন তারা খুব একটা পাত্তা দেন না। অনেক ক্ষেত্রেই “এই ছাত্র আমার দেখা সেরা ছাত্র”-টাইপের লেখা একই শিক্ষক একই বছরে একাধিক ছাত্রকে লিখে দেন, তাতে বোঝা যায়, কপিপেস্ট চিঠিতে সই করেছেন মাত্র।

টেস্ট স্কোর
টোফেল বা জিআরই স্কোর মূলত ব্যবহার করা হয় আবেদনকারীদের প্রাথমিক বাছাইয়ে, স্কোরের নিম্নসীমা দিয়ে অনেক আবেদনকারীকে শুরুতেই বাদ দেয়া হয়। এটা একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক রকম। অনেক জায়গায় বলে দেয়া থাকে কতো স্কোর লাগবে। আবার অনেক জায়গাতে জিআরই স্কোর দেয়া লাগে না। কিছু কিছু বিষয়, যেমন কম্পিউটার বিজ্ঞানে বিষয়ভিত্তিক জিআরই স্কোর চাওয়া হয়। খেয়াল রাখতে হবে, এই স্কোরটি কি রেকমেন্ডেড নাকি রিকোয়ার্ড। রেকমেন্ডেড মানে “দিলে ভালো” , আর রিকোয়ার্ড মানে দিতেই হবে।

বাছাই
যাহোক, আবেদন করার পর শুরুতে অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সাথে সম্পৃক্ত অফিস সহকারীরা টোফেল বা জিআরই-র কাঁচি চালিয়ে কিছু আবেদনপত্র কমিয়ে ফেলে। তার পর যা বাকি থাকে সেগুলো যায় ভর্তি কমিটির কাছে। ভর্তি কমিটিতে সাধারণত থাকে অধ্যাপকেরা, আর অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কয়েকজন প্রতিনিধিও থাকে। শিক্ষকেরা প্রধানত স্টেটমেন্ট অফ পারপাস নামের রচনাটি দেখে বোঝার চেষ্টা করেন এই ছাত্রটি কেমন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই আবেদনপত্রগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয় শিক্ষকদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে, (১) হ্যাঁ (২) না (৩) দেখা যাক।
হ্যাঁ গ্রুপে যারা আছে, তাদেরকে শুরুতেই ভর্তি ও ফান্ডিং এর প্রস্তাব পাঠানো হয়। ভালো ছাত্রদের টেনে আনার জন্য অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্লেন ভাড়া/হোটেল ভাড়া দিয়ে এসব ছাত্রদের বেড়াতে নিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে। (আমার সাবেক গ্রুপের এক ছাত্রকে জাপান থেকে এনেছিলো)। ছাত্ররাও এসময় মুফতে একাধিক জায়গায় ঘুরে বেড়ায়, অধ্যাপক ও পুরানো ছাত্রদের সাথে কথা বলে, তার পর সিদ্ধান্ত নেয় কোথায় ভর্তি হলে। এটা অনেক সময় ফেব্রুয়ারি মাসেই জানানো হয়।
প্রথম দফায় যাদের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, তারা কেউ কেউ রাজী না হলে ২য় দফায় ভর্তির প্রস্তাব দেয়া হয়। এই দফার প্রস্তাব আসে অনেক সময় মার্চ বা এপ্রিলে।
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অলিখিত চুক্তি অনুসারে ফান্ডিং সহ ভর্তির প্রস্তাব গ্রহন করলে এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই লিখিত কমিটমেন্ট দিতে হয়। ১৫ তারিখ পেরিয়ে গেলে আর ভর্তির সিদ্ধান্ত পালটানো যায় না।

পরামর্শ
১) স্টেটমেন্ট অফ পারপাস ভালো করে লিখুন। হুট করে লিখবেন না। মাস খানেক সময় নিয়ে ভালো করে লিখুন। নেট থেকে বা বড় ভাইদের থেকে নেয়া “চোথা” ব্যবহার করবেন না। ওগুলো ভর্তি কমিটির লোকজন দেখলেই চিনতে পারে।
২) রেকমেন্ডেশন লেটার ভালো করে লিখতে বলুন শিক্ষককে। তাতে আপনি ঐ শিক্ষকের ক্লাসে/কোর্সে কেমন করেছেন, আপনি নিজের উদ্যোগে কাজ করতে পারেন, এই রকমের কথা লিখতে বলুন।
৩) টেস্টগুলো ছাত্রাবস্থাতেই দিয়ে ফেলুন। ছাত্রাবস্থা শেষ করে চাকুরিরত অবস্থায় টেস্ট দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
(আমি কেবল প্রকৌশল ও বিজ্ঞান বিষয়ের উচ্চতর শিক্ষার ব্যাপারেই ওয়াকিবহাল, কাজেই এই তথ্যগুলো এসব বিষয়ের জন্যই প্রযোজ্য)
(এই সংক্রান্ত আরো বিস্তারিত তথ্য ও সহায়িকা বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের সাবেক ছাত্রছাত্রীদের ওয়েবসাইট http://www.csebuet.org/advice.html-এ পাবেন।)

লেখক: অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর, ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন সাইন্সেস, ইউনিভার্সিটি অফ আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম, বার্মিংহাম, আলাবামা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওয়েব সাইট: http://www.ragibhasan.com

মনবুকাগাসু বৃত্তি নিয়ে জাপানে পড়ার সুযোগ

Print Friendly and PDF
প্রতি বছর জাপান সরকারের বৃত্তি কর্মসূচির অধীনে জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। পূর্বে এটি মনবুশো বৃত্তি নামে পরিচিত ছিল। এ কর্মসূচি পরিচালনা করে জাপানের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। যেসব দেশের সাথে জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে মূলত: সেসব দেশের নাগরিকরাই এ বৃত্তি পেয়ে থাকেন। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বৃত্তির অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৬০টি দেশের প্রায় ৬৫০০০ শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মাহমুদুল হাসান
বৃত্তির ধরন
জাপান সরকার প্রদত্ত এ বৃত্তি ৭ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-
গবেষণা শিক্ষার্থী
আপনার বয়স অবশ্যই ৩৫ বছরের নিচে এবং স্নাতক পাস হতে হবে। মাস্টার্স, এমফিল বা পিএইচডি’র জন্য আবেদন এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে করতে হবে। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। আবেদনকারীকে অবশ্যই জাপানি ভাষায় অধ্যয়নে ইচ্ছুক হতে হবে। তবে এমফিল বা পিএইচডি’র মতো উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে গবেষণার সুযোগ থাকলেও জাপানি ভাষা না জানা থাকলে বৃত্তি পাওয়া যাবে না।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ পর্যায়
৩৫ বছরের কম বয়সী যে কোনো প্রার্থীকে ন্যূনতম স্নাতক হতে হবে। অবশ্যই প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা টিচার ট্রেনিং কলেজে শিক্ষক হিসেবে ৫ বছরের কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকেরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী
এ ক্ষেত্রে আপনার বয়স কমপক্ষে ১৭ থেকে সর্ব্বোচ্চ ২২ বছরের মধ্যে হতে হবে। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পাস হতে হবে। তবে স্নাতক সম্পন্নকারীরাও আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারীকে অবশ্যই জাপানি ভাষায় অধ্যয়নে ইচ্ছুক হতে হবে।
প্রতিবছর দূতাবাসের সুপারিশে ১২০ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোনোটিতে ৪ বছরের স্নাতক প্রোগ্রাম শুরুর পূর্বে Osaka University Center for Japanese Language and Culture -এ ১ বছরের প্রস্তুতিমূলক প্রোগ্রাম করতে হবে।
জাপানিজ স্টাডিজ শিক্ষার্থী
আবেদনকারীদের অবশ্যই ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে। এছাড়া নিজ দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতিতে আন্ডার গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকতে হবে। এ বিভাগে জাপানি ভাষা বা সংস্কৃতি ছাড়াও শিক্ষার্থীরা তাদের মূল অধ্যয়নের অংশ হিসেবে আরও কিছু বিষয়ে পড়তে পারবেন। যেমন- জাপানের প্রকৌশল, অর্থনীতি, কৃষি, স্থাপত্য প্রভৃতি। এ ক্যাটাগরিতে স্বল্পমেয়াদী স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রমোশন প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য JASSO(Japan Student Services Organization)-তে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই জাপানি ভাষায় ভালো জ্ঞান থাকতে হবে।
প্রকৌশল কলেজের শিক্ষার্থী
আপনার বয়স অবশ্যই কমপক্ষে ১৭ থেকে সর্ব্বোচ্চ ২২ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং উচ্চমাধ্যমিক পাস হতে হবে। স্নাতকরাও আবেদন করতে পারবেন।
বিশেষ প্রশিক্ষণ কলেজ শিক্ষার্থী
আপনার বয়স ১৭ থেকে ২২ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং উচ্চমাধ্যমিক পাশ হতে হবে।
ইয়াং লিডার’স প্রোগ্রাম
আবেদনকারীদের অবশ্যই তরুণ জনপ্রশাসক হতে হবে। যারা নিজেদেরকে দেশের ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালনের প্রত্যাশী তারাই এ ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহন করবেন। যাদের জনপ্রশাসনে ৩ থেকে ৫ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা আছে এমন স্নাতক পাস ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে কর্তৃপক্ষের সুপারিশের ভিত্তিতে বাছাই করা হবে।
বৃত্তির আবেদনে সুপারিশ ব্যবস্থা
বৃত্তির আবেদনে ইচ্ছুক প্রার্থীদের ৩টি সুপারিশ ব্যবস্থায় আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। যেমন-
দূতাবাসের সুপারিশ
আবেদনকারীদের প্রাথমিকভাবে দূতাবাস কর্তৃক বাছাই করা হয়। প্রাথমিক বাছাই হিসেবে লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা জুন থেকে আগস্টের মধ্যেই করা হয়। তারপর দূতাবাস নির্বাচিত প্রার্থীদের সেপ্টেম্বরের শুরুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাপানের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিশ
গবেষণা শিক্ষার্থী (Research Students) এবং জাপানিজ স্টাডিজ ক্যাটাগরির শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট একচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে জাপানি সরকারি, বেসরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই বাছাই করে থাকে। সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য জাপানি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে।
অভ্যন্তরীণ বাছাই
বেসরকারিভাবে অর্থায়নকৃত পূর্ণকালীন স্নাতকোত্তর ও চার বছর মেয়াদী স্নাতক শিক্ষার্থীদেরকে অভ্যন্তরীণ বাছাইয়ে বৃত্তির জন্য নির্বাচন করা হয় যা প্রতিবছর এপ্রিলেই শুরু হয়। জাতীয়, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে এ বাছাই কাজ সম্পন্ন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের বাছাই করে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বৃত্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায়।
বৃত্তিতে প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা:
১. ভাতা
২০১১ শিক্ষাবর্ষের ঘোষণা অনুযায়ী প্রত্যেক গবেষণা শিক্ষার্থীকে ১৫০,০০০ ইয়েন, মাস্টার্স প্রোগ্রাম ও প্রফেশনাল ডিগ্রী প্রোগ্রামের জন্য ১৫২,০০০ ইয়েন, ডক্টরেট প্রোগ্রামের জন্য ১৫৩,০০০ ইয়েন প্রদান করা হবে। গবেষণার জন্য প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত ২০০০ বা ৩০০০ ইয়েন বৃত্তি প্রদানের বিষয় বিবেচনা করা হয়। অবশ্য এই অর্থের পরিমান প্রতি বছরের বাজেটের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তন হয়। যেসব শিক্ষার্থী তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযথ কারণ ছাড়া দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকবে তাদের এ অর্থ প্রদান করা হবে না।
২. যাতায়াত খরচ
জাপানে গমন: কর্তৃপক্ষের নির্বাচনের পর শিক্ষার্থীর বাসস্থানের নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট থেকে নারিতা আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সাধারণ শ্রেনীর বিমান টিকিটের মূল্য প্রদান করা হবে। তবে শিক্ষার্থীর থাকার স্থান থেকে নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াতের খরচ, বিমানবন্দরের শুল্ক, বিমানবন্দরের চার্জসমূহ, বহির্গমনে বিশেষ কর এবং জাপানের মধ্যে ভ্রমণ খরচ প্রভৃতি শিক্ষার্থীকেই বহন করতে হবে (বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রের থাকার স্থান আবেদন ফরমে ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা থাকে)। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসলে ভ্রমণ ভাতার কোনো সুযোগ নেই।
জাপান থেকে যাতায়াত : আবেদন অনুযায়ী বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী যদি সর্বশেষ সময়ের মধ্যে তার দেশে ফিরতে পারে তবে তাকে নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তার দেশের বিমানবন্দরে পৌছানোর সাধারণ শ্রেণীর বিমান টিকিট প্রদান করা হবে। তবে ভ্রমনের বীমা প্রিমিয়াম বৃত্তিপ্রাপ্তকে বহন করতে হবে।
৩. শিক্ষা ভাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে তালিকাভুক্তি, ভর্তিখরচ ও পরীক্ষা জাপান সরকার কর্র্র্তৃক প্রদান করা হবে। যদি অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে উচ্চ শিক্ষায় বৃত্তি পান তবে শিক্ষার্থীকেই পরীক্ষার ফিস প্রদান করতে হবে।
৪. আবাসন ব্যবস্থা
প্রথম বছরে কর্তৃপক্ষ বৃত্তিপ্রাপ্তের জন্য প্রস্তুতিমূলক প্রতিষ্ঠানের হলে থাকার ব্যবস্থা করবে বা প্রোগ্রাম কর্তৃপক্ষ অন্য ব্যবস্থা করবেন। প্রস্তুতিমূলক কোর্স শেষে আবাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করবে জাপানের এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন। প্রতিষ্ঠানটি বিদেশী শিক্ষার্থীদের হলগুলো পরিচালনা করে। টোকিও বা ওসাকা ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পান।
এছাড়া বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রয়েছে। রয়েছে বেসরকারি বোর্ডিং হাউজ। তবে আবেদনকারী সব ছাত্রের হলে ব্যবস্থা করা হয় না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরিতে।
বৃত্তি প্রাপ্তির যোগ্যতা

শিক্ষাগত যোগ্যতা : আবেদনকারীকে কোনো জাপানি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা জাপানি বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের সমপর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। একজন ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক সমপর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে বলে বিবেচিত হবে, যদি কোন প্রার্থী-
১৬ বছরের শিক্ষা সমাপ্ত করেছে বা করবে অথবা তার বয়স ২২ বছর বা তার বেশি। বাছাই পরীক্ষায় পাশ করেছেন এবং যার বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল্যায়ন রয়েছে।
জাপানে স্নাতকে ভর্তির জন্য আবেদনের সাথে যোগ্যতার সন্তোষজনক সনদপত্র অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী একজন ডক্টরেট কোর্স সমাপ্তকারীকে আবেদনের প্রয়োজন নেই।

জাপানি ভাষা
আবেদনকারীকে অবশ্যই জাপানি ভাষা শিখতে আগ্রহী হতে হবে। শিক্ষা ও গবেষনায় নিযুক্তির যোগ্যতা হিসেবে জাপানের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।

স্বাস্থ্য
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার অধিকারী হতে হবে।

জাপানে পৌঁছা
বৃত্তিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত সেমিস্টারের শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে জাপানে পৌঁছতে হবে। এ সময়ের মধ্যে জাপান পৌছাতে ব্যর্থ হলে যাতায়াত ভাতা প্রদান করা হবে না।

ভিসার প্রয়োজনীয় জিনিস
নির্বাচিত আবেদনকারীকে জাপানে যেতে অবশ্যই কলেজ স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হবে। জাপানে পৌঁছানোর পরে আবেদনকারী তার আবাসস্থল পরিবর্তন করলে জাপান সরকারের বৃত্তির জন্য সে অযোগ্য হবে।
পড়ার বিষয়
আবেদনকারীর এমন বিভাগে আবেদন করা উচিৎ যে বিষয়ে সে আগে পড়েছে বা এর সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে। জাপানে সাধারণত নিম্নোক্ত বিষয়ে বৃত্তি দেয়া হয়-
সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক
আইন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, শিক্ষা, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, জাপানি ভাষা ইত্যাদি।
এগুলোই মূলত: স্নাতকে পড়ানো হয়। অন্যান্য ক্যাটাগরিভুক্ত বিষয়গুলো খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। তবে নন্দনতত্ত্ব, শিক্ষাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, মিউজিক, ফাইন আর্টস প্রভৃতিও গবেষণার বিষয় হিসেবে মাস্টার্স ও পিএইচডিতে চালু আছে।
ন্যাচারাল সায়েন্স
বিজ্ঞান (গনিত, পদার্থ, রসায়ন), ইলেকট্রন ও ইলেকট্রনিক স্টাডিজ (ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং), মেকানিক্যাল স্টাডিজ (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, নেভাল আর্কিটেকচার, এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং), সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেকচার (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং), কেমিক্যাল স্টাডিজ (অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনডাস্ট্রিয়াল কেমিস্ট্রি, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং) এবং অন্যান্য (মেটালারজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং, মার্কেন্টাইল মেরিন, বায়োটেকনোলজি)
এগ্রিকালচারাল স্টাডিজ (এগ্রিকালচার, এগ্রিকালচারাল কেমিস্ট্রি, অ্যানিম্যাল সায়েন্স, ভেটেরিনারি মেডিসিন, ফরেস্ট্রি, ফুড সায়েন্স, ফিশারিজ), হাইজেনিক স্টাডিজ (ফার্মেসি, হাইজিনিকস, নার্সিং), সায়েন্স (বায়োলজি) মেডিসিন, ডেন্টিস্ট্রি, হোম ইকোনমিক্স
পরিশেষে…
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য Monbukagakusho বৃত্তি একটি সুযোগ। এ বৃত্তির ব্যবস্থা না থাকলে জাপানে পড়াশোনা আমাদের জন্য একরকম অসম্ভব হতো। কারণ জাপানে বিদেশী শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম জবের সুযোগ নেই। আর জাপানের মুদ্রা ইয়েন ও টাকার মুদ্রামান অভিন্ন। তাই জাপান গমন উপার্জন ব্যতীত শুধু ডিগ্রী অর্জনের উদ্দেশ্যেই সম্ভব। এ বৃত্তির জন্য IELTS বিবেচনা করা হয় না। জাপানি ভাষা জানা থাকলে শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। জাপানি দূতাবাসের অধীনে সম্পাদিত জাপানি ভাষার কোর্সই বেশি গ্রহণযোগ্য।
বৃত্তি গ্রহীতাকে জাপানি দূতাবাস কর্তৃক প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। তাই আবেদনের প্রক্রিয়ার জন্য জাপানি দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে। প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে আবেদনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আবেদনের নির্দেশাবলী জাপানে বৃত্তির নিম্নলিখিত ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে:
বাংলাদেশে জাপানী দূতাবাসের ঠিকানা
প্লট ৫ ও ৭
দূতাবাস রোড,
ডিপ্লোমেটিক এনক্লেভ
বারিধারা, ঢাকা-১২১২

হতে পার গ্রাফিক্স ডিজাইনার

Print Friendly and PDF

রাসেল আহমেদ
www.naboprottoy.blogspot.com
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে কাজের ধরন। সঙ্গে নতুন নতুন পেশার উদ্ভব হচ্ছে। সেখানে আপনি আপনার মেধা ও মননশীলতার উৎকর্ষ দেখাতে পারেন। এভাবেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল মানুষ। কর্মজীবনটা হয়ে উঠতে পারে সাফল্যের। আপনি আপনার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের জীবনকে সাজিয়ে তুলতে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন অফুরান সম্ভাবনাময় পেশা গ্রাফিক্স ডিজাইন। আত্মবিশ্বাস ও নান্দনিক শিল্পবোধসমৃদ্ধ যে কেউ এ পেশার মাধ্যমে নিজেকে সাফল্যের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে পারেন। দিন দিন গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের চাহিদাও বাড়ছে।

ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হলে আপনাকে কী কী করতে হবে?
প্রথমেই জানা দরকার গ্রাফিক্স সফটওয়্যার কী? কম্পিউটারের মাধ্যমে যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডিজাইনের কাজ করা হয় সেগুলোই হলো গ্রাফিক্স সফটওয়্যার। আমাদের দেশে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন কয়েকটি সফটওয়্যার হলো_ এডব ফটোশপ, এডব ইলাস্ট্রেটর, এডব ইমেজ রেডি, কোয়ার্ক এক্সপ্রেস, পেজমেকার ইত্যাদি। এসব সফটওয়্যার বিভিন্ন কাজের জন্য বিশেষ উপযোগী। এডব ফটোশপ ও এডব ইমেজ রেডি ছবি সম্পাদনা ও ইফেক্ট সংযোজন করার কাজে পারদর্শী। কোয়ার্ক এক্সপ্রেস ও পেজমেকার ব্যবহার করে প্রেসে প্রিন্ট করার প্রিন্টিং ফরম্যাট সাজানো হয়।
** গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হলে আপনাকে কী কী সফটওয়্যার শিখতে হবে। গ্রাফিক্স ডিজাইন করার জন্য অনেক সফটওয়্যার রয়েছে। তবে কাজের ধরন অনুযায়ী সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়। দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হলে অনেক ধরনের সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে আপনাকে। নির্দিষ্ট কোনো সফটওয়্যার নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে চলবে না। যত বেশি গ্রাফিক্স সফটওয়্যার জানা থাকবে কাজের পরিধিও তত বাড়বে। সঙ্গে সঙ্গে উপার্জনও বাড়বে অনেকগুণ। গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করার জন্য প্রথমে নূ্যনতম তিনটি সফটওয়্যার শিখতে হবে। আমাদের দেশে বিভিন্ন পাবলিকেশন অ্যাড ফার্ম রয়েছে। পত্রিকায় কাজ করার জন্য প্রধানত এডব ফটোশপ, এডব ইলাস্ট্রেটর ও কোয়ার্ক এক্সপ্রেস এ তিনটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়।
গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে হলে একজন নারী বা পুরুষের শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক কিংবা সমমানের হতে হবে। সেইসঙ্গে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তবে এ পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে গ্রাফিক্স সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি প্রয়োজন।
** গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজের একটি বড় ক্ষেত্র। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর একাডেমিক কোর্স রয়েছে। সেগুলো অবশ্য অনেকটা ব্যয়বহুল এবং কোর্সগুলোও দীর্ঘমেয়াদি। যারা উচ্চ পর্যায়ের গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে আগ্রহী, তারা এসব প্রতিষ্ঠানে কোর্স করতে পারেন আর যাদের হাতে সময় কম তারা বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইন ট্রেনিং সেন্টার থেকে তিন বা ছয় মাসের কোর্সও করতে পারেন। এছাড়া যুব উন্নয়ন অধিদফতর এ ধরনের কোর্স পরিচালনা করে, সেখান থেকেও প্রশিক্ষণ নেওয়া যেতে পারে।
** গ্রাফিক্স ডিজাইন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাজেই আমাদের দেশে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের কাজের সুযোগ রয়েছে। গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে হলে একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই ডিজাইন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। তাই প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। বিজ্ঞাপন শিল্প থেকে শুরু করে প্রিন্টিং শিল্পের সব ধরনের কাজেই গ্রাফিক্সে যথেষ্ট কাজ হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের গ্রাফিক্স ডিজাইন আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের দেশেই শুধু নয়, এখন সারাবিশ্বেই ক্রিয়েটিভ বা গ্রাফিক্স সেক্টরে জব মার্কেট অনেক ভালো। এ পেশায় সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। জব মার্কেট উন্নত হওয়ার পাশাপাশি আমাদের এখানে শিক্ষার মান অবশ্যই বেড়েছে। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক্স ডিজাইন পড়ানো হচ্ছে।
কোথায় পড়াশোনা করা যায় : ফাইন আর্টস, গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউট, শান্ত মারিয়াম, ইউডাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে। এখন লেখাপড়ার পরিবেশও অনেক ভালো বলা যায়। কয়েক বছর আগেও এমন পরিবেশ ছিল না। বর্তমানে আমাদের দেশে এত বেশি অ্যাডফার্ম, এত বেশি আইডিয়া, এত বেশি ডিজাইনার_ তার মধ্যে সারভাইভ করা অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে। যদি কাজে স্বকীয়তার প্রকাশ না থাকে তাহলে টিকে থাকাটাই কষ্টকর। একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও আইডিয়া লেভেল ভালো না হলে তিনি হয়তো কাজ করতে পারবেন, তবে চ্যালেঞ্জে টিকে থাকতে পারবেন না।
পেশা হিসেবে মর্যাদা :গ্রাফিক্স ডিজাইনার একটি সম্মানজনক পেশা। এ পেশায় বেতনটা নির্ভর করে দক্ষতার ওপর। এ সেক্টরে মাসে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা আয় করা যায় সহজেই। আর প্রথম সারির দৈনিক, টিভি চ্যানেল, অ্যাড ফার্মগুলোতে চাকরি হলে বেতন অনেক বেশি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে ডিজাইনারদের বেতন দশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে এক লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য পেশার চেয়ে এখানে ঝামেলা কম। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিসে ঠায় বসে থাকতে হয় না।

সুইডেনে উচ্চশিক্ষা

Print Friendly and PDF
পড়ার বিষয়
পরিবেশ বিজ্ঞান, ভাষা শিক্ষা , কৃষি গবেষণা ও  ইঞ্জিনিয়ারিং- এসব বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য সুইডেনকে আদর্শ বলা হয়। তবে এর পাশাপাশি আরো কিছু বিষয়  উল্লেখযোগ্য। বিষয়গুলো হলো- এমবিএ, টেলিকমিউনিকেশন, আইন, ম্যাথমেটিক্স, জনস্বাস্থ্য, আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন, মেডিক্যাল, অর্থনীতি, ভূগোল, হিউম্যান রিসোর্স, হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট, ফিল্ম ও মিডিয়া, লাইফ সাইন্স ইত্যাদি।
ভাষা ও শিক্ষাব্যবস্থা
সুইডেনের অফিসিয়াল ভাষা সুইডিশ হলেও প্রায় ৮৯% মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে। তাই সেখানে ইংরেজিকে সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ বলা হয়। এখানে সুইডিশ ও ইংরেজি –উভয়ই মাধ্যমেই পড়াশুনা করা যায়। অনার্স পর্যায়ে সুইডিশ ভাষা জানলে ভালো। তবে মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সুবিধা হলো প্রায় ৬০০’র বেশি বিষয় ইংরেজি ভাষায় পড়া যায়। সুইডেনে অনার্স ৩/৪ বছর, মাস্টার্স বিষয়ভেদে ১/২ আবার কোনোটাতে ৩ বছরও লেগে যায়। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন মেয়াদী নন-ডিগ্রি প্রোগ্রাম, ডিপ্লোমা, পিএইচডি, পোস্ট-ডক্টোরাল ও কিছু প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম। National Agency for Higher Vocational Education- এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রাম করানো হয়। বর্তমানে শ্রম-বাজারে এসব প্রশিক্ষণের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ করা যায়।
প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা-
Myndigheten for yrkeshogskolan
Box- 145
SE-721 05 vasteras, Sweden.
Email: info@yhmyndigheten.se
যোগ্যতা
ভর্তির শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই করা হয়। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একাডেমিক ফলাফল দেখে আবার কখনো বা ভাষাগত যোগ্যতা দেখে। সুতরাং ভাষা ও বিগত পরীক্ষাগুলোর ফলাফল উভয়ই ভালো হওয়া দরকার। সুইডিশ ভাষার জন্য আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট (কলাভবন, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়) থেকে কোর্স করতে পারেন। অপরদিকে, ইংরেজি ভাষার দক্ষতাস্বরূপ  TOEFL বা IELTS এর প্রাপ্ত নাম্বার দেখা হয়। TOEFL পরীক্ষার মোট ১২০ নাম্বারে নূন্যতম ৮৫ নাম্বার এবং IELTS পরীক্ষার ৯.০ পয়েন্টের মধ্যে নূন্যতম ৬.৫ পেতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে বসেও IELTS ও TOEFL পরীক্ষায় নিজের যোগ্যতা যাচাই করতে পারেন।
বিস্তারিত জানতে- www.ielts.org
IELTS পরীক্ষার কেন্দ্র-
British Council Dhaka
5, Fuller road, -1000
Tel no.+88 02 8618905
TOEFL পরীক্ষার কেন্দ্র-
1. American Alumni Association
House 145, Street 13B, Banani
Dhaka 1213
Phone: +88029881669
2. Grameen Star Education Center
69/B, Panthopath, Dhaka
আবেদনের সময়
সুইডেনে বছরে দুটি সেমিস্টার। একটির মেয়াদ আগস্টের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। অপরটি মধ্য জানুয়ারি থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত। বিদেশে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র ও ভিসা নিয়ে প্রায় ৬ মাস এমনকি এক বছরও সময় লেগে যায়। তাই যে সেমিস্টারে ভর্তি হতে আগ্রহী সেই সময়ের দিকে খেয়াল রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
পড়াশুনা ও থাকার খরচ
শুরুতেই অনলাইনে আবেদনপত্রের জন্য প্রায় ৯০০ SEK (১০৫৫৭ টাকা) ব্যয় করতে হয়। তাছাড়া বিষয়ভেদে অনার্স, মাস্টার্সে বছরে ন্যুনতম ৮০,০০০ SEK থেকে ১,৪০,০০০ SEK (৯,৩৮,৪০০টাকা-১৬,৪২,২০০টাকা) -এর মধ্যে খরচ পড়ে। এছাড়া থাকা, খাওয়া ও অন্যান্য খরচবাবদ বছরে প্রায় ৭৩৯৯ SEK (৮৫৬২৯ টাকা) খরচ হয়।
পার্টটাইম জব
যদিও অধিকাংশ শিক্ষার্থী- যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান তারা শুরুতেই পার্টটাইম জবের খোঁজ করতে থাকেন। তবে পড়াশুনার ক্ষতি করে পার্টটাইম জব করা ঠিক নয়। তাছাড়া সুইডেন সরকার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ৫০০’র বেশি স্কলাপশিপ দিয়ে থাকে, যেগুলোর অনেকেই পড়াশুনাসহ থাকার খরচও বহন করে। তাই সুইডেনে পার্টটাইম জবের তেমন প্রয়োজন পড়ে না।  তবে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা বা ২০ ঘন্টার পার্টটাইম জব করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের জবের মধ্যে রয়েছে-
১. বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন। এই কাজে এক দিনে প্রায় ১২০ SEK থেকে ১৮০ SEK (১৪০৭ টাকা-২১১১ টাকা) আয় হয়।
২. বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কাজ করা। এতে মাসে ৭০০০ SEK থেকে ৮০০০ SEK (৮২,১১০ টাকা-৯৩,৮৪০ টাকা) আয় হয়।
৩. সপ্তাহের কয়েক দিন, খোলা বাজারে কাপড় বিক্রি করলে মাসে ৭০০০ SEK থেকে ৯০০০ SEK (৮২,১১০ টাকা-১,০৫,৫৭০ টাকা) আয় হয়।
স্কলারশিপ
আগেই বলেছি, সুইডেনে প্রচুর স্কলারশিপ আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
১. The Swedish Institute Study Scholarship
এই স্কলারশিপ মূলত অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে দেয়া হয়। এটি প্রায় ৭৫%-১০০% খরচ বহন করে। এর কার্যক্রম মার্চ মাস থেকে শুরু হয়।  কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যায়।
২. Swedish Institute Guest Scholarship
এটি মূলত পিএইচডি ও পোস্ট-ডক্টোরাল শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়। এটি পিএইচডি শিক্ষার্থীর জন্য মাসে ১২০০ SEK বা ১,৪০,৭৬০ টাকা এবং পোস্ট-ডক্টোরালের জন্য মাসে ১৫,০০০ SEK বা ১,৭৫,৯৫০ টাকা বহন করে।
৩. ইরামাস মানডাস স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
এটা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে থাকে। প্রায় ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত। সুইডেনের Lund University, Swedish University of Agricultural science, Uppsala university ও Karolinska Institutet Medical University – এই প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত।
আরো জানতে ভিজিট করুন- http://www.scholars4dev.com/2979/erasmus-mundus-scholarships-for-developing-countries/
এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রামের যোগসূত্র থাকায় সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করেও বৃত্তি পাওয়া যায়।
তাছাড়া UNESCO ফেলোশিপ প্রোগ্রাম থেকেও সুইডেনে পড়ার জন্য স্কলারশিপ দেয়া হয়। মজার ব্যাপার হলো- বিভিন্ন বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতা, ডিজাইন, লেকচার দেয়া- ইত্যাদির আয়োজন করেও বিদেশী শিক্ষার্থীরা সুইডেনে পড়াশুনার জন্য স্কলারশিপ পেতে পারেন। এ বিষয়ে জানতে দেখুন-www.studyinsweden.se/scholarships/scholarship-challenges/
অপরদিকে, ভর্তির সময় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকদের সাথে অনলাইনে মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ  করলেও তারা নিজেদের রিসার্চের অধীনে স্কলারশিপের খবরাখবর আন্তরিকতার সাথে দিয়ে থাকেন। তাছাড়া প্রতিবছর সুইডেনে পড়াশুনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নোটিশে বিভিন্ন স্কলারশিপের খবর থাকে। স্কলারশিপের খবর জানতে রীতিমত শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নোটিশে খোঁজ রাখুন।
দেখুন এই লিঙ্কে-  www.moedu.gov.bd
আবহাওয়া
যে কোনো দেশে যাওয়ার আগে সে দেশের আবহওয়া জেনে নেয়া ভালো। তা নাহলে সেই আবহাওয়ার সাথে খাপ নিজেকে খাপ খাইয়ে চলা কঠিন। পৃথিবীর উত্তর মেরুর দিকে হওয়ায় সুইডেনের আবহাওয়া মৃদু প্রকৃতির। জুলাই মাসের তাপমাত্রা প্রায় ১৩-১৭ ডিগ্রি সে. এর মধ্যে থাকে। ফেব্রুয়ারির দিকে প্রচণ্ড শীত। তাপমাত্রা অনেক সময় মাইনাস পর্যায়ে অর্থাৎ -৩ থেকে -২২ ডিগ্রি সে. এ নেমে যায়। দক্ষিণাঞ্চলে ডিসেম্বরে আর উত্তরাঞ্চলে অক্টোবরের দিকে বরফ পড়তে দেখা যায়। অপরদিকে গ্রীষ্মকালে এমনও দেখা যায় যে, দিনের ২৪ ঘন্টার  ১৯ ঘন্টাই সূর্যের আলো থাকে। অর্থাৎ রাতের অংশ কম।
ভর্তি ও ভিসা প্রসেসিং
অনলাইনে বা ডাকযোগে জরুরি কাগজপত্র জমা দেয়ার পর স্কলারশিপ পাওয়া স্বত্ত্বেও একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেশের ব্যাংকে জমা আছে কিনা সেই ব্যাপারে একটা নিশ্চিতপত্র দেখাতে হয়। কেননা, পড়াশুনার বাইরে যে কোনো আপদকালীন সময়ে টাকার প্রয়োজন পড়তে পারে। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে সুইডিশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করুন। ভর্তি নিশ্চিত হলে ইন্টারভিউ নিয়ে হাইকমিশন থেকেই ভিসা প্রদান করা হয়।
যোগাযোগ-
সুইডিশ হাইকমিশন
Embassy of Sweden
House 1, Road 51,
Gulshan 2
Dhaka 1212
Bangladesh
Tel: +880 2 883 31 44-47
Fax: +880 2 882 39 48
E-mail: ambassaden.dhaka@foreign.ministry.se
ambassaden.dhaka-visum@foreign.ministry.se
opening hours: Sunday-Thursday 08.00-16.00
প্রধান কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়
সাম্প্রতিক র‌্যাংকিং অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের লিংক দেয়া হলো-
লেখক : সম্পাদনা সহযোগী, ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স

বৃত্তি নিয়ে ভারতে পড়ার সুযোগ

Print Friendly and PDF
undefined
মাহমুদুল হাসান
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স (ICCR) ভারত সরকারের একটি স্বায়ত্বশাসিত সংগঠন। এটি ভারতের বৈদেশিক সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে থাকে। স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ১৯৫০ সালের ৯ এপ্রিলে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ICCR এর অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে এর বিভিন্ন স্কলাশিপ প্রোগ্রাম। প্রতিবছর ২১টি স্কলারশিপ স্কীমের আওতায় বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশের ছাত্রদের ২০০০ স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। যার অধিকাংশই এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশ। ICCR তার নিজস্ব স্কলারশিপ স্কীম পরিচালনা ছাড়াও ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে অন্যান্য স্কীমের জন্য একটি সংস্থা হিসেবেও কাজ করে। দেশ ভিত্তিতে বৃত্তির পরিমাণ যদিও উল্লেখ করা থাকে না। তবে, সাধারণত এ বৃত্তিতে ৫০-৬০ জন বাংলাদেশী ছাত্র প্রতিবছর সুযোগ পেয়ে থাকে। অবশ্য এর বিপরীতে বহুগুণ আবেদন করে।
এ বৃত্তি গ্রহণকারীদের থাকা-খাওয়া সব খরচ বহন করে ICCR কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক সব ছাত্রের জন্য হলে থাকার ব্যবস্থা আছে। শিক্ষার্থীকে শুধু যাতায়াত খরচ বহন করতে হয়। টিকিট জমা দিলে সে খরচও দেয় ICCR কর্তৃপক্ষ। তাই আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেট অর্জনে প্রত্যাশী ছাত্ররা এ বৃত্তি গ্রহণ করতে পারেন।
এ বৃত্তি সাধারণত দুটি শ্লটে বা সময়ে দেয়া হয়ে থাকে। ভারতের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য নির্বাচিতদের ক্লাস শুরুর সময়ের ওপর নির্ভর করে দুটি শ্লটের বিষয় আসে, তবে বৃত্তির ক্ষেত্রে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই।
বাংলাদেশী ছাত্রদের জন্য ICCR এর স্কলারশীপ স্কীমগুলো হলো:
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স (ICCR) স্কলারশীপ স্কীম
বিভিন্ন ভারতীয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশীদের জন্য সুযোগ আছে আন্ডার গ্রাজুয়েট, পোস্ট গ্রাজুয়েট, এমফিল, পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ লেভেলে।
বাংলাদেশ স্কলারশিপ স্কীম
ICCR এ স্কীমের আওতায় বাংলাদেশী ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান করে আন্ডার গ্রাজুয়েট, পোস্ট গ্রাজুয়েট, এমফিল, পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ লেভেলে। এ স্কীম শুধু বাংলাদেশী ছাত্রদের জন্য সংরক্ষিত এবং এর আওতায় সুযোগ পাওয়া অন্যান্য স্কীমের চেয়ে সহজ।
সার্ক চেয়ার/ফেলোশিপ/স্কলারশিপ স্কীম
ICCR সার্ক স্কলারশিপ স্কীম এর অধীনে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউটগুলোতে আন্ডার গ্রাজুয়েট ও পোস্ট গ্রাজুয়েট লেভেলে বাংলাদেশ থেকে বৃত্তি প্রদান করে।
AYUSH স্কলারশিপ স্কীম
বাংলাদেশসহ বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর জন্য ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে মোট ১৫ টি বৃত্তি প্রদান করা হয় AYUSH বিভাগের পক্ষ থেকে। যার অন্তর্ভুক্ত হলো আয়ুর্বেদিক, ইউনানী ও হোমিওপ্যাথির মতো বিষয়।
এছাড়া  জেনারেল কালচারাল স্কলারশীপ স্কীম, কালচারাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, কমনওয়েলথ স্কলারশীপ/ফেলোশিপ প্লান প্রভৃতির আওতায়ও বাংলাদেশী ছাত্ররা আবেদন করতে পারেন।
আবেদনের জন্য যোগাযোগ
আবেদন করতে IELTS এর বাধ্যবাধকতা নেই। তবে অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষতা থাকতে হবে এবং সাধারনত ১ ঘন্টার একটি ইংলিশ টেস্ট নেয়া হয়। স্নাতকে আবেদনের জন্য এইচএসসিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ফলাফল বিবেচনা করা হয়। অনুরূপভাবে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি কোর্সের ক্ষেত্রেও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী থাকা প্রয়োজন। বৃত্তির জন্য আবেদন করার পর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ পাওয়া যায়, এরপর মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করলেই ভিসার পথ পরিস্কার হবে।
আবেদনের সুযোগ দেয়া হয় বিভিন্ন স্কীমে বিভিন্ন সময়ে। যেমন ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ স্কলারশিপ স্কীমে সময়সীমা ছিল ৮ থেকে ১৯ জানুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত, সার্ক স্কলারশিপ স্কীমে ১২ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আগ্রহীরা পরবর্তী ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আবেদনের সুযোগ নিতে পারেন।
এ বৃত্তির আবেদনপত্র ও অন্যান্য তথ্যের জন্য ভারতীয় হাইকমিশনের এডুকেশন উইং-এ যোগাযোগ করতে হবে। হাউজ: ২, রোড নং: ১৪২, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
এছাড়া অ্যাসিসটেন্ট হাইকমিশন অফিস থেকেও ফর্ম সংগ্রহ করা যায়। ঠিকানা: হাউজ: ২১১, কুলসি,চট্টগ্রাম এবং হাউজ: ২৮৪/২, হাউজিং স্টেট, সপুরা উপশহর রাজশাহী।

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা

Print Friendly and PDF

গবেষণা হোক কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস হোক কিংবা আর্টস যে কোনো বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ডিগ্রি বিশ্বমানের। আর তাই উন্নত প্রযুক্তির স্বাদ নিতে

www.naboprottoy.blogspot.com
অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই প্রথম পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র। তার সাথে রয়েছে স্কলারশিপ ও পার্টটাইম চাকরির সুযোগ, যা আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের সুবিধার  পাশাপাশি আগ্রহও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার নিয়মকানুন সম্পর্কে  বিস্তারিত জানাচ্ছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কলামিষ্ট-ফাতেমা মাহফুজ।
লেখাপড়ার ভাষা ও যোগ্যতা
যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়ার ভাষা ইংরেজি। তবে ভাষার ওপর দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই করার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি তাদের পছন্দ অনুযায়ী টেস্ট পরীক্ষা নিয়ে থাকে। যেমন: SAT, ACT, GMAT, GRE, IELTS, MAT, TOFEL, TSE ইত্যাদি। যারা অনার্স করতে চান, তাদের অবশ্যই SAT অথবা ACT পরীক্ষা দিতে হবে। বর্তমানে মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য GRE  টেস্টের নাম্বারটা গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। এসব টেস্টের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন-
শিক্ষা ব্যবস্থা
এখানকার উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সময়কাল আমাদের দেশের মতোই। ব্যাচেলর কোর্স করতে ৩-৪ বছর আর মাস্টার্স করতে ২ বছর লাগে। তবে পিএইচডি’র সময়সীমা রিসার্চের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে। তাছাড়া এখানে নন-ডিগ্রি প্রোগ্রামেরও আয়োজন করা হয়।
পড়ার বিষয়
প্রায় সব বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া যায়। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী সেখানে গবেষণামূলক বিষয় বা ইঞ্জিনিয়ারিং করতে যায়। উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো- ফিজিক্স, ম্যাথ, কেমিস্ট্রি, বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন, আর্টস, সোশ্যাল সায়েন্স, আইন, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি। এছাড়া মেডিক্যাল সায়েন্সের নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের ওপরে গবেষণা করা যায়।
খরচ
যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়ার মান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি খরচ অনেক বেশি। চার বছরের কোর্স করতে টিউশন ফি ১৫-২০ লাখ টাকা। তাছাড়া মাস্টার্স কোর্স করতে টার্ম প্রতি প্রায় ৩০-৭০ হাজার টাকার মতো লাগবে।

স্কলারশিপ ও পার্টটাইম জব
টাকার খরচ দেখে অনেকে হয়তো ঘাবড়ে যেতে পারেন। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই, কেননা সেখানে আছে পার্টটাইম চাকরির সুযোগ। আছে ৭৫% পর্যন্ত স্কলারশিপ পাওয়ার ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের সর্বশেষ স্কলারশিপের ব্যাপারে জানতে পারেন। বিস্তারিত জানতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসেও যোগাযোগ করতে পারেন। তবে স্কলারশিপের জন্য অবশ্যই বিগত পরীক্ষার ফলাফল ও ভর্তির আগে তারা যেসব পরীক্ষা নেবে তাতে নির্দিষ্ট মার্কস পেতে হবে। এ সংক্রান্ত কিছু লিঙ্ক-
ভর্তি এবং অত:পর
আপনি যদি অনার্স কোর্স করতে যেতে চান, তবে ঝঅঞ অথবা অঈঞ পরীক্ষার পর আপনার পছন্দের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ভর্তিফর্ম সংগ্রহসহ যাবতীয় নিয়ম জেনে নিন।  আর আপনি যদি গবেষণার কোনো বিষয়ে মাস্টার্স বা পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হতে চান, তাহলে যার অধীনে আপনি গবেষণা করতে আগ্রহী, তাকে নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা, থিসিস দিয়ে মোটিভেশান চালান। স্টেটমেন্ট অব মোটিভেশান, সিভি পাঠান। ঘরে বসেই তাদের সাথে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়ান। অত:পর সেখান থেকে সাড়া পেলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে ভিসা সংগ্রহ করুন।
থাকার ব্যবস্থা
ভর্তির পর অবশ্যই ক্লাস শুরুর আগেই সেখানে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব হোস্টেল আছে, তারপরও অনেকেই মাসিক ব্যয়, যাতায়াত খরচ ও যাবতীয় সুবিধা বিবেচনা করে হোটেল, মোটেল, যুব হোস্টেল, আন্তর্জাতিক হাউজিং, এমনকি সেখানকার স্থানীয় ফ্যামিলির সাথেও  থাকেন। আরো বেশি জানতে জানতে নিচের লিঙ্কে  ভিজিট করুন-
সেরা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
মনে রাখা ভালো, যেহেতু বিদেশে প্রচুর প্রতিযোগিতা, তাই নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করতে হবে। নিম্নে কিছু বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেয়া হলো। আগ্রহীরা ভিজিট করতে পারেন।

তরুণ উদ্যোক্তা এরিক ফিজেলবর্গ

Print Friendly and PDF
Nabo Prottoy
এরিক ফিজেলবর্গ
তখনো তিনি হাই স্কুলের গণ্ডি পার হননি, অথচ এর মধেই ১১টি ওয়েব বেইজড কোম্পানির মালিক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই ১৭ বছর বয়সী এই তরুণ উদ্যোক্তার কথা লিখেছেন প্রাঞ্জল সেলিম
সাধারণত দেখা যায় স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্ররা হাত খরচের টাকা দিয়ে শখের কোনো জিনিস কেনে। কিন্তু এরিক ছিলেন একটু অন্য রকমের। তিনি এই টাকা কখনও খরচ করতেন না। জমিয়ে রাখতেন। সেই সময় থেকেই তিনি চিন্তা করতেন ব্যবসা করার। আর সেজন্যই জমাতেন এই টাকা।
ব্যস, গ্র্যাজুয়েশন শুরু করার আগেই আপলোড করে দিলেন তার ওয়েবসাইটগুলো। মোট ১১টি সাইট খুলেছিলেন তিনি। সেগুলোর সবই বলা যায় নন-প্রফিটেবল ছিল। তার প্রজেক্টগুলোর মধ্যে এমন সাইটও ছিল, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেমিস্টারের প্রজেক্ট ওয়ার্কের বিবরণ দেওয়া থাকত, এমনকি সেগুলোর সমাধানও থাকত। মূলত এই ধরনের কাজের জন্যই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। এ প্রজেক্টগুলো ভালোই চলছিল। একসময় তার কাছ থেকে একটি কোম্পানি তার ওয়েব সাইট কিনতে চাইল। তিনিও রাজি হলেন। ১১টি থেকে তিনটি ওয়েবসাইট বিক্রি করে দিলেন তিনি। ট্রিকার টক, রামানিয়া ফাউন্ডেশন এবং ক্লাসলিফ নামের সাইটগুলো বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি।
পোকাটা তার মাথায় ঢুকেছিল স্টিভ জবসের গল্প পড়ে ও শুনে। তাদের ক্লাসের আরও অনেকে অনুপ্রাণিত ছিলেন এই স্টিভ জবসের কাজে। কিন্তু তার মতো করে বুকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পেরেছে খুব কম মানুষই। বিখ্যাত আইটি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা জবসের জীবনের শুরুটাও খানিকটা এলোমেলো। পড়ালেখায় মন ছিল না, বাদ পড়ে গিয়েছিলেন কলেজ থেকে। এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র একুশ বছর বয়সে মনের মতো কম্পিউটার বানানোর চিন্তা থেকে অ্যাপলের শুরু।
নিজের কম্পিউটার নেড়েচেড়ে সে রকমই কিছু করার ইচ্ছাটা হয়তো উঁকি দিয়েছিল ওয়েনসের মাথায়। ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দিয়ে যেটা করে বসল তাতে অন্তত একদিক থেকে শুধু জবস কেন, অন্য সবাইকে হারিয়ে দিয়েছেন তিনি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে হয়ে গেছে মিলিয়ন পাউন্ডের মালিক। মাত্র সাত বছর বয়সে তার হাতেখড়ি কম্পিউটার চালানোয়। প্রথমে সারাক্ষণ এ যন্ত্রটি নিয়েই মেতে থাকতেন। ফলে অল্প কয়েক দিনে ওয়েব ডিজাইনের মতো জটিল সব কারবার তার আয়ত্তে চলে আসে। ১০ বছর বয়সে পেয়েছিলেন একটি মেকিন্টোশ কম্পিউটার। তখন এতে ছোটখাটো প্রোগ্রাম বানাতে শুরু করেন তিনি। চার বছর পর ২০০৮ সালে হাতখরচের পয়সা বাঁচিয়ে নিজের একটি ওয়েবসাইট খোলেন। নাম দেয় ম্যাক বঙ্ বান্ডেল। সেখান থেকে তার তৈরি প্রোগ্রাম বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষ কিনতে পারতেন টাকার বিনিময়ে। ব্যবসায়িক বুদ্ধি অবশ্য ভালোই খাটিয়েছেন ছোট্ট এরিক। নিজের পাশাপাশি অন্যান্য নির্মাতার বানানো প্রোগ্রামও বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছিলেন তার সাইটে। কেউ একসঙ্গে অনেক প্রোগ্রাম কিনতে চাইলে কখনো ১০ শতাংশ দামে বিক্রি করে দিতেন তিনি। আর প্রতিটি প্রোগ্রাম বিক্রির কিছু অংশ কোষাগারে জমা হতো সেবামূলক কাজে ব্যয়ের জন্য। এতে অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়ে যান তিনি। একই সঙ্গে ভারি হতে থাকে তার টাকার ঝোলা। দুই বছরের মাথায় আয় পৌঁছে যায় ৭০ হাজার পাউন্ডে।
দ্রুত সাফল্য পেয়ে থেমে যাননি তিনি। এরপর বেছে নিয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক বিজ্ঞাপনের কাজ। এরপর ব্রাঞ্চর নামে বিজ্ঞাপন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে নতুন একটি ওয়েবসাইট খোলেন তিনি। এখান থেকে মাসে অন্তত ৩০০ মিলিয়ন বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে যায় ইন্টারনেট ও আইফোনে। সেসব বিজ্ঞাপনে কেউ ক্লিক করামাত্র টাকা চলে আসে ওয়েনসের নামে। এরই মধ্যে এই ব্যবসা থেকে পাওয়া গেছে পাঁচ লাখ পাউন্ড। উইলিয়াম হিলের মতো বড় বড় কোম্পানি এখন তার সেবা গ্রহণ করে।
দুটি প্রতিষ্ঠানের হর্তাকর্তা তিনি নিজে। এর সদর দপ্তর তার ঘরে কম্পিউটারের সামনের জায়গাটুকু। এখানে তিনি আবার চাকরিও দিয়েছে আটজনকে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বাস করা কর্মীরা সবাই বয়সে তার চেয়ে বড়। তারা ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানাভাবে সাহায্য করে তাকে। স্কুল শেষে ও সপ্তাহান্তে অবসর পেলে তিনি বসে যান ব্যবসার কাজে। সামনের বছরে দুটো শাখা খোলার পরিকল্পনা আছে তার। ব্যবসা নিয়ে কেউ কথা বলতে এলে বেশ ভারিক্কিভাব চলে আসে তার মধ্যে। নাকের ওপর চশমাটা পেছনে ঠেলে আরও শক্ত করে বসিয়ে নেন।
ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘১০ বছর পরে কেমন থাকব তা জানি না, কিন্তু ১০০ মিলিয়ন আয় না করা পর্যন্ত থামছি না।’ তিনি চান তার ছেলেবেলার নায়ক স্টিভ জবসের মতো তার নামও সবার মুখে মুখে প্রচারিত হোক।
সম্প্রতি তিনি একটি বিশাল প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৩-এর শেষ দিকে সেটার প্রকাশ ঘটবে বলে জানিয়েছেন তিনি, তবে কী নিয়ে কাজ করছেন সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই দিতে চাননি এই তরুণ প্রতিভা।
(সূত্র: ইত্তেফাক | লেখক: প্রাঞ্জল সেলিম)

ব্যবসায় সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে

Print Friendly and PDF
মো: বাকিবিল্লাহ


দৃশ্যপট ১

Nabo Prottoyমাহবুবুল হক। ছাত্রজীবন থেকেই স্বপ্ন সফল উদ্যোক্তা হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। সফলতার সাথে সেটি পরিচালনা করে তিন বছরের ব্যবধানে মালিক হলেন আরো কয়েকটি কোম্পানির। বর্তমানে একটি গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একজন সফল উদ্যোক্তা।


দৃশ্যপট ২

মাহদী হাসান। ছাত্রজীবনে তিনিও স্বপ্ন দেখতেন সফল উদ্যোক্তা হবার। পড়াশোনা শেষ করে করে তিনিও প্রতিষ্ঠা করেন একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। পাঁচ বছরেও তেমন কোনো সফলতার দেখা পেলেন না। অবশেষে সব কিছু বাদ দিয়ে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।
এমন বিপরীতমুখী দৃশ্য আমরা প্রায়ই দেখি। অনেকেই চান ব্যবসা করতে। সফল উদ্যোক্তা হতে। কিন্তু কেউ হতে পারেন। কেউ পারেন না। কিন্তু কেন? আসুন জেনে নেই সফল উদ্যোক্তার কিছু বৈশিষ্ট্য।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে একজন সফল উদ্যোক্তার নিম্নোক্ত গুণাবলী থাকে।


১. আত্মবিশ্বাস

এটি এক জাদুকরি শক্তি যা নিজের কর্মকাণ্ড এবং নিজের শক্তি-সামর্থের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। বলা হয়- আত্মবিশ্বাসই সফলতার মূল শর্ত। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে এ গুণটি থাকা অপরিহার্য।


২. লক্ষ্যভিত্তিক প্রচেষ্টা

ভালো ফল পেতে হলে কোনো কাজ করার আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার। আরো দরকার নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা। একজন সফল উদ্যোক্তা শুধু কিছু কাজই সম্পাদন করেন না। বরং সব সময় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে মনযোগী হন।


৩. ঝুঁকি গ্রহণ

একজন সফল উদ্যোক্তা অনুধাবন করেন যে, কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে তিনি ক্ষতির সম্মুখীনও হতে পারেন। তবুও লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঝুঁকি গ্রহণের মতো প্রয়োজনীয় মানসিকতা ও সাহস তার থাকে।
ব্যবসায় উদ্যোক্তা হলেন তারা- যারা সিদ্ধান্ত নেবেন, ব্যবস্থা নেবেন। বিশ্বাস করেন যে, নিজেদের ভাগ্য তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তারা মনে করেন, সফলতা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে না। বরং তা নির্ভর করে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের ওপর।
তাহলে উপরের কোন বৈশিষ্ট্যটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়। আপনি যদি নিজের সামর্থের ওপর আস্থা রাখতে না পারেন, তবে প্রথম যে সমস্যাটি হবে সেটি হলো- লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
আপনার আত্মবিশ্বাসকে উচ্চতর পর্যায়ে রাখতে কিছু কৌশল আলোচনা করা হলো-


ইতিবাচক চিন্তা

ইতিবাচক চিন্তার শুরুটা হবে ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে। কাজ শুরুর আগে মনে করুন, প্রথম ধাপেই ভালো কিছু একটা হবে। নেতিবাচক চিন্তাকে মোটেই প্রশ্রয় দিবেন না এক্ষেত্রে। বিশ্বাস রাখুন, আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে না পৌঁছানোর কোনো কারণই নেই।
মনে রাখবেন, ইতিবাচক চিন্তা সংক্রামক। যখন তা ছড়িয়ে পড়ে- তখন নতুন নতুন বন্ধু, গ্রাহক ও আইডিয়ার জন্ম দেয়।
নাছোড়বান্দার মতো লেগে থাকা
আপনার সব ইতিবাচক চিন্তা, বিশ্বাস ও আইডিয়া পৃথিবীতে অচল যদি আপনি তা কাজে না লাগান। আপনাকে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের অভিযোগ চলবে না এক্ষেত্রে। কাজ করতে হবে নাছোড়বান্দার মতো।
কোনো ধাপ অতিক্রম করতে একটি উপায় একবার অবলম্বন করুন। সফল না হলে নতুন উপায় বের করে আবার চেষ্টা করুন। সফল হওয়ার আগে কাজটি ছেড়ে দেয়া চলবে না।
প্রবন্ধের প্রথমাংশে যে বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছি- তা সব সফল উদ্যোক্তারই থাকে। আপনিও সামনের দিকে তাকান। আপনাকে কোন অবস্থানে দেখতে চান, তা নির্দিষ্ট করুন। নিজের সামর্থ, শক্তি ও দক্ষতার ওপর আস্থা রাখুন। নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যান। কোনোভাবেই পিছিয়ে যাবেন না। প্রচেষ্টা ছেড়ে দিবেন না। আর তা যদি করতে পারেন, তবে অর্ধেক পথ পৌঁছে গেছেন -এ কথা মনে করতেই পারেন আপনি।

 
Design by AbsCreation